ভাষা কাকে বলে? ভাষার উৎপত্তি আলোচনা কর ? বাংলা ভাষার আদি উৎস?

ভাষা কাকে বলে?

ভাষা মানুষের সঙ্গে অন্য প্রাণীর একটি পার্থক্যমূলক বৈশিষ্ট্য। লেখা এবং বলার এ উপায়টি মানুষকে প্রাণিজগতের বাকি অংশ থেকে আলাদা করে। লেখা পদ্ধতির আবিষ্কার আমাদের এমনভাবে যোগাযোগ করতে এবং নিজেদের প্রকাশ করতে দেয়, যা কেবল অনন্যভাবে মানব বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ভাষা কোথা থেকে এসেছে এবং কীভাবে এটি বিবর্তিত হয়েছে?

ভাষার উৎপত্তি:

সারা পৃথিবীর প্রায় চার হাজার ভাষাকে প্রথমে তাদের সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রধানত বারোটি ভাষাবংশে ‘S ভাগ করে নেওয়া হয়েছিল। যেমন ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য, সেমীয়-হামীয়, বান্টু, ফিন্নো-উগ্রীয়, তুর্ক- মোঙ্গোল-মাঞ্চু, ককেশীয়, দ্রাবিড়, আস্ট্রিক, ভোট-চীনীয়, উত্তর-পূর্ব সীমান্তীয়, এস্কিমো, আমেরিকার আদিম ভাষাগুলি ইত্যাদি। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান ভাগ ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বা আর্য ভাষা। এই ভাষাবংশটি ভৌগোলিক বিস্তার ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির দিক থেকে এগিয়ে ছিল। এই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশই হল |

বাংলা ভাষার আদি উৎস:

আনুমানিক ২৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময় থেকে এই ভাষার মানুষেরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং কালক্রমে এর থেকে জন্ম নেয় দশটি প্রাচীন ভাষা, যেমন ইন্দো-ইরানীয়, বালতো-স্নাবিক, আল্বানীয়, আর্মেনীয়, গ্রীক্, ইতালীক্, টিউটনিক্, কেলতিক্, তোখারীয়, হিট্টীয়। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান ভাষার নাম ছিল ইন্দো-ইরানীয় ভাষা। এই ভাষাভাষী মানুষেরা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিত। তারা একসময় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সময়টা ছিল মোটামুটিভাবে ১৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। একটি শাখা ইরানে গিয়ে ইরানীয় আর্য ভাষার সূত্রপাত ঘটালো।

অন্য ভাগটি ভারতীয় আর্য উপশাখা নাম নিয়ে ভারতে প্রবেশ করল ও প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার সূচনা করল। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার দুটি রূপ ছিল কথ্যরূপ ও সাহিত্যিক রূপ। অঞ্চল বা প্রদেশের ওপর ভিত্তি করে মধ্যযুগীয় ভারতীয় আর্য ভাষার যুগে কথ্যরূপটির চারটি শাখার জন্ম হল প্রাচ্য, উদীচ্য, মধ্যদেশীয়, দাক্ষিণাত্য। প্রাচ্য শাখা থেকে প্রাচ্যা ও প্রাচ্যমধ্যা উপশাখার জন্ম হল। সেই প্রাচ্যা ভাষা থেকে মাগধী প্রাকৃত ও পর্যায়ক্রমে সেখান থেকে মাগধী অপভ্রংশ-অবহঠের মধ্যে দিয়ে একসময় বাংলা ভাষার জন্ম হল। সময়টা ছিল আনুমানিক ৯০০ খ্রীষ্টাব্দ। এই হল বাংলা ভাষার জন্মের ইতিবৃত্ত। এই একই সময়কালে বাংলা ছাড়াও ওড়িয়া, অসমিয়া, মৈথিলী, ভোজপুরী, মারাঠী, সিন্ধী, পঞ্জাবী প্রভৃতি ভাষারও জন্ম হয়। এদের একসাথে বলা হত নব্য ভারতীয় আর্যভাষা।

এখন ভাষা হল এক সজীব সত্তা। তার বদল অনিবার্য। বদল বা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই যে কোনো ভাষা সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলে। বাংলা ভাষার জন্মের পরে সময় থেকে সময়ান্তরে তার মধ্যে নানা বদল লক্ষ্য করা গেল। এই বদলের দিকে দৃষ্টি রেখে বাংলা ভাষার কয়েকটি ভাগ করা হল।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading