মেগালিথিক সংস্কৃতির সাধারণ লোকেরা মৃতদেহকে সমাধি দিত। এই সংস্কৃতির মূল আকর্ষণ হল মৃতদেহের সুরক্ষার জন্য বড়ো-বড়ো পাথর দিয়ে ঘেরা স্থানে মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হত। মেগালিথিক শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘মেগাস’ ও ‘লিথোস’ থেকে এসেছে। ‘মেগাস’ কথার অর্থ হল ‘বড়ো’ এবং ‘লিথোস’ কথার অর্থ হল ‘পাথর’। মেগালিথিক সংস্কৃতি ভারতের পূর্ব-মধ্য এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে পাওয়া গেছে, কিন্তু দক্ষিণ ভারতে এই সংস্কৃতির বিশেষ গুরুত্ব ছিল। দক্ষিণ ভারতে প্রস্তর যুগের পরই এই সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল।
দক্ষিণ ভারতে প্রশ্নগিরি, পুদুকোট্টি প্রভৃতি স্থান থেকে মহাগ্রন্তর সমাধির নিদর্শন পাওয়া গেছে। কর্ণাটকের ব্রযুগিরি থেকে ডোলমেন সমাধি পাওয়া গেছে। ডোলমেন বলতে বোঝায় পাথরের টেবিলাকৃতি সমাধি। ব্রন্থগিরি, মান্ত্রী, অস্ত্রপ্রদেশের কদম্বপুর, নাগার্জুনকোন্ডা, মীরাপুর ও অমরাবতী, তামিলনাড়ু আদিতচলুর, সনুর, কেরলের মাচড় প্রভৃতি স্থান থেকে নব্যপ্রস্তরীয় মহাপ্রস্তর নিদর্শন পাওয়া গেছে।
মহাপ্রস্তর যুগের সংস্কৃতিতে প্রস্তরের ব্যবহার জোর কদমে শুরু হয় এবং তার সঙ্গো সঙ্গ্যে একসময় লোহার ব্যবহারও শুরু হয়েছিল। এই সময় কালো ও লাল মৃৎপাত্রের উদ্ভব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই সংস্কৃতির সময়কাল আনুমানিক 1000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ |
থেকে প্রথম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়। এই সময় মানুষ পাহাড়ের ঢালে বসবাস রোত। এই সময়কারের মানুষ জলসেচের সাহায্যে ধান ও রাগি উৎপাদন করত। এই সংস্কৃতির যুগেই দক্ষিণ ভারতে বহু গ্রামের উদ্ভব হয়েছিল।
কাবেরী নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত অলগরৈ থেকে মহাপ্রস্তর যুগের এক প্রধান আধাসীয় স্থান এবং সমাধি পাওয়া যায়। এখানকার ভিত্তি প্রস্তরচিত্রের সঙ্গে হরমা প্রস্তর চিত্রের অনেক মিল রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম উত্তর ভারতের বিদ্য পার্বত্য অঞ্চলের মির্জাপুরে বৃহৎ প্রস্তর সমাধি আবিষ্কার করেন। পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক শর্মার নেতৃত্বে এই অঞ্চলে ব্যাপক অনুসন্ধানের কাজ চলে এবং বেশ কিছু সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছিল।
উত্তরাংশে মহাপ্রস্তরীয় ক্ষেত্রগুলি হল-কাকোরিয়া, জঙ্গলমহল এবং কোটিয়া। বেলন উপত্যকায় কোটিয়া থেকে বেশ কিছু লোহার যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। বারাণসীর চকিয়াতে অবস্থিত চন্দ্রপ্রভা নদীর উপত্যকায় হথিনিয়া পাহাড় থেকেও সমাধি পাওয়া গেছে। বেরারের মাধুরঝড়ী ও নায়কুন্ড অঞ্চল থেকে মহাপ্রস্তরীয় যুগের তামার অলংকারের সঙ্গে ঘোড়ার অবশেষ পাওয়া গেছে।