রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়নে আচরণবাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | Discuss the Behavioural Approach to the study of Political Science.

Table of Contents

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়নে আচরণবাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আচরণবাদী তত্ত্ব

আচরণবাদী তত্ত্ব (Behavioral Theory) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি, যা ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই তত্ত্বের মূল ধারণা হলো রাজনৈতিক আচরণ ও কার্যকলাপের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। আচরণবাদী তত্ত্ব রাজনৈতিক আচরণ, মনোবিজ্ঞান, এবং সমাজবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং প্রতিষ্ঠানগুলি বোঝার চেষ্টা করে। এটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় একটি পরিমাপযোগ্য এবং অভিজ্ঞতালব্ধ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, যা সাধারণত ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর আচরণের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দেয়।

আচরণবাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্য

  1. গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি: আচরণবাদী তত্ত্বে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি ব্যবহারিক এবং পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ, পরিমাপযোগ্য তথ্য সংগ্রহ, এবং পূর্বাভাসের জন্য নির্ভুল মডেল তৈরিতে মনোযোগ দেয়।
  2. একক এবং গোষ্ঠীগত আচরণ: এই তত্ত্বে একক ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর আচরণকে বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরা হয়। ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর রাজনৈতিক মানসিকতা, আচরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা করা হয়।
  3. পরিসংখ্যান এবং তথ্য সংগ্রহ: আচরণবাদী তত্ত্বে পরিসংখ্যান এবং তথ্য সংগ্রহের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। রাজনৈতিক আচরণ এবং প্রক্রিয়ার বিষয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করা হয়।
  4. অনুসন্ধান এবং অভিজ্ঞতা: আচরণবাদী তত্ত্ব অনুসন্ধানী এবং অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। এটি গবেষণার ফলাফলের পূর্বাভাস এবং সাধারণিকরণ করতে সক্ষম।
  5. মূল্যনিরপেক্ষতা: আচরণবাদী তত্ত্বের গবেষণায় গবেষকদের ব্যক্তিগত মূল্যবোধ এবং মতামত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার উপর জোর দেওয়া হয়, যা গবেষণার নিরপেক্ষতা এবং বৈজ্ঞানিকতা নিশ্চিত করে।

আচরণবাদী তত্ত্বের প্রয়োগ

আচরণবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়:

  1. ভোটার আচরণ: ভোটারদের ভোটদান পদ্ধতি, রাজনৈতিক পছন্দ, এবং ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হয়।
  2. রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞান: নেতাদের এবং সাধারণ জনগণের রাজনৈতিক মানসিকতা এবং চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করা হয়।
  3. রাজনৈতিক যোগাযোগ: গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়।
  4. গোষ্ঠীর প্রভাব: রাজনৈতিক দল, সম্প্রদায়, এবং অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলির প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়।

সমালোচনা এবং সীমাবদ্ধতা

যদিও আচরণবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা এবং সমালোচনাও রয়েছে:

  1. সংক্ষিপ্ত দৃষ্টিভঙ্গি: আচরণবাদী তত্ত্ব মাঝে মাঝে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং গভীরতা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে ব্যর্থ হতে পারে।
  2. মূল্যবোধের অবহেলা: এই তত্ত্বে গবেষণার সময় ব্যক্তি বা সমাজের মূল্যবোধ এবং আদর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যা গবেষণার ফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
  3. তাত্ত্বিকতা কম: আচরণবাদী তত্ত্ব প্রায়ই বাস্তব জীবনের পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেয়, যা তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

উপসংহার

আচরণবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় একটি বৈজ্ঞানিক এবং অভিজ্ঞতালব্ধ পদ্ধতি প্রয়োগ করে, যা ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর আচরণ এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে সহায়ক। তবে এই তত্ত্বের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং সমালোচনা রয়েছে, যা গবেষণার পরিপূর্ণতা এবং গভীরতার জন্য গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

আরো পড়ুন-

আদর্শ স্থাপনকারী দৃষ্টিভঙ্গী | Normative Approach

রাষ্ট্রের প্রকৃতির নিরিখে মার্ক্সীয় তত্ত্বটির মূল্যায়ন কর।

সমাজতত্ত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি

বিতরণকারী ন্যায়ের তত্ত্বটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর

রাষ্ট্রের উদ্ভবে সামাজিক চুক্তি মতবাদটি সংক্ষেপে আলোচনা কর

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়নে আচরণবাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর

জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা দাও। জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা কর

স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও। স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি আলোচনা কর। স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর |

সার্বভৌমিকতার একত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর |

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে আলোচনা কর |

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading