রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক মতবাদটি আলোচনা কর। Discuss the historical theory regarding the origin of state.

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক মতবাদ

রাষ্ট্রের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে, যার মধ্যে ঐতিহাসিক মতবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। ঐতিহাসিক মতবাদ (Historical Theory) অনুযায়ী, রাষ্ট্রের উৎপত্তি মানব সমাজের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিবর্তনের মাধ্যমে ঘটেছে এবং এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ গঠিত হয়েছে।

ঐতিহাসিক মতবাদের মূল ধারণা:

ঐতিহাসিক মতবাদে বলা হয় যে, রাষ্ট্র কোনো কৃত্রিম বা দার্শনিক ধারণার ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়নি, বরং এটি মানব সমাজের বিবর্তনের একটি প্রাকৃতিক ফলাফল। বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি একত্রিত হয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করেছে। এই তত্ত্বের মতে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সমাজের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এবং সংকটের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের সামাজিক সংগঠন এবং শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে।

ঐতিহাসিক মতবাদের মূল দৃষ্টিকোণ:

  1. অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রভাব: ঐতিহাসিক মতবাদ অনুসারে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি অভ্যন্তরীণ সামাজিক শক্তির (যেমন: শ্রেণীবিভাজন, সম্পদ বৈষম্য, ধর্ম, যুদ্ধ) প্রভাবে ঘটেছে। প্রাচীন সমাজে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ এবং শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একক নেতৃত্বের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রয়োজনে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে।
  2. শ্রেণী সংগ্রাম: ঐতিহাসিক পদার্থবিদ্যা, বিশেষ করে কার্ল মার্ক্সের তত্ত্ব অনুযায়ী, রাষ্ট্রের উৎপত্তি শ্রেণী সংগ্রামের ফলস্বরূপ। প্রাচীন সমাজে ভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সম্পদ এবং ক্ষমতার বৈষম্য বৃদ্ধি পেলে শাসকদের একটি শ্রেণী (যেমন রাজা বা অভিজ্ঞান) অন্যান্য শ্রেণীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। এটি রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, যেখানে শাসনব্যবস্থা এবং সরকার পরিচালনা ছিল সম্পদের দখলকারী শ্রেণীর হাতে।
  3. ধর্মের ভূমিকা: ঐতিহাসিক মতবাদে ধর্মেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রাচীন সমাজে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি প্রায়ই রাষ্ট্রের একটি অংশ ছিল এবং ধর্মীয় নেতা বা দেবতা দ্বারা শাসিত সমাজে রাষ্ট্রের ধারণা গড়ে ওঠে। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে শাসকগণ জনগণের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন, যা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং শক্তির আধিপত্য স্থাপন করেছিল।
  4. অর্থনৈতিক পরিবর্তন: ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে অর্থনৈতিক পরিবর্তনও রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব এবং মুদ্রা ব্যবস্থার বিকাশ রাষ্ট্রের বিকাশে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। সামাজিক শ্রেণীবিভাজন এবং সম্পদের বণ্টন প্রক্রিয়া রাষ্ট্র গঠনের পেছনে অর্থনৈতিক কারণকে স্পষ্টভাবে উন্মোচন করে।

ঐতিহাসিক মতবাদের বিশ্লেষণ:

ঐতিহাসিক মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তিকে একটি ধারাবাহিক এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখায়, যা বিশেষ একটি সময় বা ঘটনায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের বিকাশ এবং এর পরিবর্তনশীল কাঠামোকে প্রতিফলিত করে। তবে এই তত্ত্বটি কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, কারণ এটি রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করার জন্য শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলোকেই প্রধান উপাদান হিসেবে তুলে ধরেছে। এটি বাইরের বাহ্যিক প্রভাব বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্ব কমিয়ে দেখাতে পারে।

উপসংহার:

ঐতিহাসিক মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তিকে একটি দীর্ঘকালীন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ফল হিসেবে বিবেচনা করে। এটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকে শুধুমাত্র রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে, সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় বিকাশের সঙ্গেও সম্পর্কিত করে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের জীবনের পরিবর্তনশীলতা এবং শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ঘটে, যা বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গঠন করে।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading