রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্বের বিশ্লেষণাত্মক মূল্যায়ন কর।

আদর্শবাদ:-প্রাচীন মতবাদ: রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ক মতবাদগুলির মধ্যে আদর্শবাদ হল এক গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক তত্ত্ব। শুধু দার্শনিক তত্ত্ব নয় এ হল বিশ্ববীক্ষ্যা। আদর্শবাদ হল এক অতি প্রাচীন মতবাদ। প্রাচীন গ্রীক পণ্ডিত প্লেটো-অ্যারিস্টটলের রচনায় এই মতবাদের উন্মেষ ঘটেছে। তবে পরবর্তীকালের বিভিন্ন রাষ্ট্র দার্শনিকের ধ্যান-ধারণার দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে মতবাদটি বিকশিত হয়েছে। এবং এই বিকাশের ধারায় মতবাদটির পুনর্বিন্যাসও ঘটেছে। বিভিন্ন নামে আদর্শবাদ অভিহিত হয়ে থাকে। এই মতবাদ চরম মতবাদ (Absolute theory), অধিবিদ্যামূলক তত্ত্ব (Metaphysical theory), ভাববাদী তত্ত্ব (Idealist theory), দার্শনিক তত্ত্ব (Philosophical theory) প্রভৃতি হিসাবেও পরিচিত

Table of Contents

সারমর্মসারমর্ম: আদর্শবাদ বা ভাববাদ অনুসারে বাহ্যবস্তুসমূহ ভাব (idea) মাত্র। বস্তুমাত্রেই কোন-না-কোন বিশেষ ভাবের প্রকাশ। এমনকি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাহ্যবস্তুও ভাবের সমাহারে গঠিত। কারণ একমাত্র ভাবেরই অস্তিত্ব আছে। ভাববাদী দার্শনিকগণ রাষ্ট্রকে এভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রও ভাবের আধার বিশেষ। ভাববাদ অনুসারে রাষ্ট্র মানবসমাজের সর্বোচ্চ নৈতিক আদর্শের মূর্ত বিগ্রহ। সুতরাং রাষ্ট্রের সকল আদেশই চরম সত্যের ন্যায় সর্বদা পালনীয়। অন্যথা করা শুধু অন্যায় নয়, গুরুতর নৈতিক অপরাধ। রাষ্ট্র মানুষের স্বাভাবিক, অপরিহার্য ও চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র ছাড়া ব্যক্তির পরিপূর্ণ জীবন ও আত্মোপলব্ধি অসম্ভব। কেবল রাষ্ট্রের মধ্যে বাস করেই মানুষ তার ব্যক্তিত্বের চরম বিকাশ সাধন করতে পারে। রাষ্ট্রের আদর্শই চরম, চূড়ান্ত এবং অভ্রান্ত (“The state is omnipotent, infallible and divine in essence.”)। তাই রাষ্ট্রই হল ব্যক্তি স্বাধীনতার উৎস ও সংরক্ষক।

রাষ্ট্রের উপর দেবত্ব আরোপ: একটি সমুচ্চ আদর্শ বা নৈতিক মানের উপর প্রতিষ্ঠিত করে রাষ্ট্রকে সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রাধান্য প্রদানই হল এই মতবাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রের আদর্শই হল। চরম, চূড়ান্ত ও অভ্রান্ত। আদর্শবাদ রাষ্ট্রের উপর দেবত্ব আরোপ করেছে। একটি উচ্চ বেদীতে রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত করে এই মতবাদ রাষ্ট্রের অধীন সকল মানুষকে সেই বেদীমূলে পূজা করতে বলেছে। এই মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের নিজস্ব ইচ্ছা, অধিকার ও স্বার্থ আছে। ব্যক্তির ইচ্ছার সঙ্গে রাষ্ট্রের ইচ্ছার মিল নাও থাকতে পারে। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় ব্যক্তিবর্গের ‘প্রকৃত ইচ্ছা’র সমষ্টি ‘সাধারণ ইচ্ছা’র দ্বারা। ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের মতভেদের ক্ষেত্রে ‘সাধারণ ইচ্ছা’-ই প্রাধান্য পাবে। কারণ সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে ব্যক্তি অপ্রকৃত ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading