লোকনৃত্য কাকে বলে?
নৃত্য শব্দটি সাধারণত শারীরিক নড়াচড়ার প্রকাশভঙ্গীকে বোঝায়। এ প্রকাশভঙ্গী সামাজিক, ধর্মীয় কিংবা মনোরঞ্জন ক্ষেত্রে দেখা যায়। গীতবাদ্যের ছন্দে অঙ্গভঙ্গির দ্বারা মঞ্চে চিত্রকল্প উপস্থাপনের ললিত কলাই নৃত্য বা নাচ। নৃত্যকলার সংজ্ঞা নির্ভর করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নন্দনতত্ত্বিক, শৈল্পিক এবং নৈতিক বিষয়ের উপর।
ভারতীয় লোকনৃত্য:
ছৌ নাচ:
পুরুলিয়া জেলার ছৌ নাচ ।। মুখোশ ও রং-বেরঙের পোষাক পরে ছৌ শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন ৷ অন্য নাচের থেকে ছৌ-এর শিল্পকলা একেবারে আলাদা ৷ এই নাচের ভঙ্গি মার্শাল আর্টকে মনে করিয়ে দেয়। ছৌ নাচের বেশ কিছু নিজস্ব ভঙ্গি রয়েছে ৷ যেমন- দানব চাল (দানব বা রাক্ষসের নৃত্য), দেব চাল (দেব-দেবীদের মতো নৃত্য), পশু চাল (পশুর মতো নৃত্য), বাঘচাল (বাঘের মতো নৃত্য), ময়ূর চাল, হরিণচাল, ইত্যাদি ৷
রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি জনপ্রিয় পৌরানিক কাহিনি ছৌ নাচের প্রধান বিষয়বস্তু ৷
ঝুমুর নাচ:
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান ও মেদিনীপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয় নাচ ও গান হল ঝুমুর ৷ অসমের আদিবাসীদের মধ্যে ও এই নাচ দেখতে পাওয়া যায়।।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বর্ষার আহ্বান বা কোনও শুভ কাজের সময় ঝুমুর নাচ-গান করা হয়ে থাকে ৷ ঝুমুর গানের ভাষায় সাধারণত দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি উঠে আসে।
বিতা নাচ:
বাংলার গ্রামগঞ্জের সন্তানহীন মহিলারা বহুদিন পর সন্তান লাভের পর দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে দল বেঁধে ব্রিতা নাচ করেন ৷ আবার গুটিবসন্ত ইত্যাদি রোগের থেকে পরিবারের লোকজন সুস্থ হলেও মহিলারা এই নাচ করে থাকেন ৷ গ্রামে মহিলারাই শুধুমাত্র এই নাচে অংশগ্রহণ করতে পারেন ৷
টুসু নাচ:
বীরভূম, পুরুলিয়া, মেদিনীপুরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের টুসু পরবে এই নাচ হয়ে থাকে ৷ মকর সংক্রান্তি সময় টুসু পরব হয় ৷ পৌষ মাসের বিকেল বেলায় ধর্মীয় রীতি মেনে গ্রামের মেয়েরা দল বেঁধে টুসু নাচ নেচে থাকে ৷
রায়বেশে নাচ:
এই নাচ পুরুষরা পরিবেশন করে থাকেন ৷ একটি বড় বাঁশ নিয়ে বিভিন্ন রকমভঙ্গিতে এই নৃত্য করা হয়ে থাকে ৷ নাচের সময় শিল্পীরা তির ছোড়া, বর্শা ছোড়া ও তলোয়ার খেলার অভিনয় করে থাকেন ৷ শিল্পীদের ডান পায়ে ঘুঙুর পরা থাকে ৷ ঢোল ও কাঁসির তালে এই নাচ নাচেন শিল্পীরা।
সাঁওতালি নাচ:
ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সাঁওতালরা অন্যতম ৷ পশ্চিমবঙ্গে ও ঝাড়খণ্ডে সবথেকে বেশি সাঁওতাল বসবাস করেন ৷সাঁওতালদের নাচ অন্যান্য নাচের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ৷ এদের নিজস্ব সংগীত রয়েছে ৷
লাঠি নাচ:
বাংলা লোকনৃত্যের এক উল্লেখযোগ্য নাচ হল লাঠি নাচ ৷ মহরমের সময় ১০দিন ধরে এই লাঠি নাচ হয়ে থাকে ৷ মূলত লাঠি নিয়ে এই নাচ করা হয় বলে এর নাম লাঠি নাচ ৷ এই নাচে রাগ, দুঃখ, ব্যথা, কষ্ট, ভালোবাসা সব ধরনের মনোভাব খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয় ৷ মহরমের সময় অল্পবয়সী ছেলেরা দল বেঁধে এই নাচ পরিবেশন করে ৷
করম নাচ:
করম নাচ হল ফসল কাটার নাচ ৷ গ্রাম বাংলায় ফসল কাটার আগে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে এই নাচ করে থাকেন ৷ মহিলা ও পুরুষদের দুটি আলাদা দল থাকে ৷ পুরুষদের মধ্যে একজন প্রধান থাকেন ৷ তাঁর হাতে একটি বড় তাল পাতার হাতপাখা থাকে ৷ তিনি সেটি দিয়ে পাকা ফসলে হাওয়া দিতে থাকেন ৷ ফসল পাকার আনন্দে সকলে নৃত্য করেন ৷ এই নাচ সাধারণত মঞ্চে বা কোনও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয় ৷
কাঠি নাচ:
কাঠি নাচ প্রকৃতপক্ষে রণপা নাচ ৷ রণপার ওপর দাঁড়িয়ে পুরুষশিল্পীরা এই নাচ পরিবেশন করেন ৷ এই নাচ যথেষ্ট বিপজ্জনক ৷ এর জন্য দীর্ঘদিনের অনুশীলন প্রয়োজন ৷
এছাড়া ও কিছু নাচ। যেমনন জারিনাচ, খ্যামটা নাচ, ইত্যাদী