লোকসঙ্গীত কাকে বলে?
যে সংগীতে, গ্রাম বাংলার লোকের জীবনের হর্ষ, বিষাদ, সার্থকতা, ব্যর্থতার কথা তথা গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের জীবনযাত্রা, রীতিনীতির চিত্র ফুটে উঠে, তাকেই লোকসংগীত বলা হয়।
লোকসংগীতের উদাহরণ:
সংগীতের একটি ধারা লোকসংগীত। এবং লোক সংগীতেরও বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে, যথা ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, পল্লীগীতি, গম্ভীরা, ইত্যাদি।
লোকসংগীতের বৈশিষ্ট্য:
লোকসংগীতের এর বাণী (কথা), সুর, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতেই থাকে। এবং লোকের মুখে মুখে চলে আসা গানের কথা এবং সুরের ক্রমপরিবর্তনের কারণে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, গীতিকার বা সুরকার নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয় না।
যে কোনো একটি লোকসঙ্গীতের বিস্তারিত পরিচয় দাও:
ভাওয়াইয়া:
যে সমস্ত গানের মধ্য দিয়ে মনের অনুভূতি প্রকাশ করা হয়। ভাওয়াইয়া মূলত বাংলাদেশের রংপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে ও আসামের গোয়ালপাড়ায় প্রচলিত এক প্রকার পল্লীগীতি। এসকল গানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ গানগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইত্যাদির সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদী-নালা কম থাকায় গরুর গাড়িতে চলাচলের প্রচলন ছিল। আর গরুর গাড়ির গাড়োয়ান রাত্রে গাড়ি চলাবস্থায় বিরহ ভাবাবেগে কাতর হয়ে আপন মনে গান ধরে। উঁচু-নিচু রাস্তায় গাড়ির চাকা পড়লে তার গানের সুরে ভাঁজ পড়ে। এই রকম সুরে ভাঙ্গা বা ভাঁজ পড়া গীতরীতিই ‘ভাওয়াইয়া’ গানে লক্ষণীয়। প্রেম-বিয়োগে উদ্বেলিত গলার স্বর জড়িয়ে যেরকম হয়, সেরকম একটা সুরের ভাঁজ উঁচু স্বর হতে ক্রমশঃ নীচের দিকে নেমে আসে। সুরে ভাঁজ পড়া ভাওয়াইয়া গানের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। আব্বাসউদ্দিনকে ‘ভাওয়াইয়া গানের সম্রাট’ বলা হয়।