বা, বর্তমান সময়ে প্রেক্ষিতে শাস্তি শিক্ষা ভূমিকা লিখুন।
শান্তি শিক্ষা কাকে বলে?
শাস্তি শিক্ষা হল সামাজিক সংগতি বিধানের সেই প্রতিকার যার মাধ্যমে সমাজে হিংসার পথ থেকে শিক্ষার্থীদের অপসারণের উপায়। যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন করা। শাস্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চ মানসিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ জন্ম দেয়। এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন এক মূল্যবোধ গড়ে তোলে যার মাধ্যমে সমগ্র সমাজ উপকৃত হয়। UNESCO শিক্ষার যে চারটি লক্ষ্য নির্ণয় করে তার মধ্যে Learning to live together এবং Learning to be পরোক্ষভাবে শান্তি শিক্ষার সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত।
শান্তি শিক্ষা ধারণা গুলি লিখুন
শাস্তি শিক্ষার ধারণা: সামাজিক সংগতিবিধান, বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন এবং সংগতিপূর্ণ জীবনযাপনই হল শাস্তির মূল বাতাবরণ। শাস্তি বলতে মূলত
বোঝায় প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের সাংস্কৃতিক ও নৈতিকতার উন্নতিকে। সহমর্মিতা, সহানুভূতি, আত্মসংযম, উৎসর্গ, জনসেবা, নৈতিকতা, ব্যক্তি-সমাজের কল্যাণসাধন প্রভৃতির উপর ভিত্তি করেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। শান্তি বলতে শুধুমাত্র অহিংসাকেই বোঝায় না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তি মানুষের আন্তরিকতার প্রয়োজন।
শিক্ষা হল সামাজিক সংগতিবিধানের এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সার্থক অভিযোজনে সক্ষম হয়। মানুষ সামাজিক জীব এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে অভ্যস্থ এবং এই শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্যই ব্যক্তি মানুষ শিক্ষার আঙিনায় প্রবেশ করে। ব্যক্তি শিক্ষার্জন করে মূলত শাস্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই। সমাজের রীতিনীতি, আচার-আচারণ, প্রথা প্রভৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে চলার জন্য শিক্ষা ব্যক্তিকে উপযোগী করে তোলে। শিক্ষা
সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার স্বরূপ। মানুষের জীবন পরিবেশে তাকে সব সময় সামাজিক আবহের সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে হয়।
একথা স্বীকার করতেই হবে যে, একজন ব্যক্তি কখনোই নিজের চেষ্টায় সামগ্রিক পরিবেশ পরিবর্তিত করতে পারে না, অন্যের সহায়তা তার প্রয়োজন হয়। শিক্ষা প্রক্রিয়াই সেই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার সাহায্যেই ব্যক্তি তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে অভিযোজন করতে শেখে এবং সমাজ তথা সংস্কৃতির যোগ্য উত্তরাধিকারী হয়।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় শিক্ষা প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্যই হল সমাজে শাস্তি প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষার মূল লক্ষ্যই হল ব্যক্তির সমগ্র গুণাবলির বিকাশসাধন করা, যার মধ্য দিয়ে সে শাস্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বলা যায়, শাস্তি শিক্ষা হল এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা যে শিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ নৈতিক জীবন যাপনের জ্ঞান অর্জন করে। “শাস্তি শিক্ষা হল মানুষ গড়ার শিক্ষা এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির বিভিন্ন নৈতিক গুণাবলি প্রকাশিত হয়।” শাস্তি শিক্ষা হল দক্ষতার শিখন। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য দক্ষতাসম্পন্ন সমাজ গড়ার কারিগর তৈরি করা-যারা সারা বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করবে।
শাস্তি শিক্ষা হল সামগ্রিক শিক্ষা। যা ব্যক্তির দৈহিক, প্রাক্ষোভিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক নৈতিক মূল্যবোধ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। ভালোবাসা, সহানুভূতি, সত্যতা, স্বচ্ছতা, সহযোগিতা, সুন্দর সমাজ ও সবুজ পৃথিবীর প্রতি সম্ভ্রমপূর্ণ ভালোবাসা’ এই দার্শনিক তত্ত্বের উপর শান্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত।
শান্তি শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রকৃতি, পরিধি ও গুরুত্ব-
শাস্তি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল সারা বিশ্বে শাস্তির বাতাবরণ তৈরি করা। শাস্তি যেমন শিক্ষার্থীদের চরিত্রগঠনে গুরুত্ব দেয় তেমনি শিক্ষার্থীর মধ্যে জাতীর ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মূল্যবোধ গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। সমগ্র বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরির উদ্দেশ্যে এই শিক্ষার লক্ষ্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
(a) শাস্তি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন করা এই শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
(b) শাস্তি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির সংকীর্ণ মনোভাব দূর করে ব্যক্তিকে সমাজ। ও দেশের উপযোগী করে তোলা।
(c) ব্যক্তির চিন্তন শক্তি, কল্পনা শক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা প্রভৃতির বিকাশ ঘটিয়ে ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ আসনে উন্নীত করা। (d) শাস্তি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তোলা এই শিক্ষার অন্যতম একটি লক্ষ্য।
(d) ব্যক্তিকে চরিত্রবান ও হৃদয়বান করে গড়ে তোলাও এই শিক্ষার উদ্দেশ্য।
(c) শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বে যুদ্ধের আশঙ্কা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
(f) শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি, সামাজিক প্রথা ও সামাজিক সংস্কৃতি বিষয়ে জ্ঞান দান করাও এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
(g) ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য।
(h) ব্যক্তির মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে তোলা এই শিক্ষার লক্ষ্য।
(i) সমাজ তথা দেশকে যুদ্ধ হিংসার গন্ডি থেকে বের করে নিয়ে আসা এই শিক্ষার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।
(j) ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অভিযোজন করতে সাহায্য করা।
(k) ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা ও মনোভাবের উন্নীতকরণ এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য।
(l) ব্যক্তিকে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবধর্মী জ্ঞানদান করে সমাজের উপযোগী করে তোলা।
শাস্তি শিক্ষার প্রকৃতি-
শাস্তি শিক্ষার মাধ্যমে যেহেতু ব্যক্তির চারিত্রিক, নৈতিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নান্দনিক ইত্যাদি সমস্ত দিকের সুষম বিকাশ ঘটে, তাই এই শিক্ষার প্রকৃতির মধ্যে উক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত বলে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন-
(a) সর্বজনীন শিক্ষা: শাস্তি শিক্ষা একটি সর্বজনীন শিক্ষা প্রক্রিয়া। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য এই শিক্ষা উন্মুক্ত। যে-কোনো মেধার শিশুই এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। নিজের সামর্থ্য, চাহিদা, প্রবণতা অনুযায়ী শিশুরা এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
(b) অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা: ব্যক্তিকে তার দায়দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এই শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
(c) ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধন: শান্তি শিক্ষা ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক শিক্ষা। শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তুলতে এবং একজন নাগরিকের কাছে সমাজ যা প্রত্যাশা করে সেই প্রত্যাশা পূরণে এই শিক্ষা একান্ত সহায়ক। (
d) সংস্কৃতি বা কৃষ্টিমূলক শিক্ষা শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির কৃষ্টি। ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। e) সংগতিবিধানে সহায়ক শিক্ষা: শাস্তি শিক্ষা ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে শেখায়। সমাজের প্রতিটি সদস্য যাতে পরস্পরের সঙ্গে (
মানিয়ে নিতে পারে তাহলে সমাজ থেকে হিংসা, দ্বন্দ্ব, বিভেদ প্রভৃতি দূর হবে এবং আগামী দিনে একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠবে। (1) সামাজিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষা: শাস্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশ সাধনে সহায়ক। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে।
(g) বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষা: শাস্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশ সাধনে সহায়ক। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাগুলি বিকশিত হ্যা, বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।
(h) সৌন্দর্যবোধের শিক্ষা: শাস্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটায়। এই শিক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা একটি স্বপ্নের সমাজ তথা পৃথিবীর সন্ধান পাবে।
(v) শান্তি শিক্ষার পরিধি আলোচনা প্রসঙ্গে বলা যায়, শান্তি প্রতিষ্ঠাই যেহেতু এই শিক্ষার মূল আলোচ্য বিষয় তাই এই শিক্ষার পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে শাস্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে LINO বা জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন UNESCO বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে ব্যস্ত। Learning to live together বা একসঙ্গে বসবাসের জন্য শিক্ষা এবং Learning to be বা মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা এর পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তির যে অবদান অর্থাৎ জাতীয় সংহতি বা National integration এবং International Understanding বা আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার জন্য বে শিক্ষা তাও এই শাস্তি শিক্ষারই অঙ্গ।
মূল্যবোধের শিক্ষা বা Value oriented education যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বা শিক্ষা সম্পর্কে যে বোধ তৈরি হয় তাও শাস্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।
নৈতিকতার শিক্ষা যার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার মধ্যে নৈতিক জ্ঞান বিকশিত হয়, শিক্ষার্থী ভালো-মন্দ বিচার করতে পারে এবং যথাসময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করতে পারে তাও এই শাস্তি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মকানুন, সময়ের মূল্য, আচার-আচরণ প্রভৃতি বিকশিত হয় তাও শান্তি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
Learning to be বা মানুষ হওয়ার জন্য যে শিক্ষা যার মধ্য দিয়ে ব্যাপ্তি সমাজ একজন যোগ্য উত্তরাধিকার পায়, যোগ্য মানুষ পায়, যে সবসময় সমাজের আদর্শ হয়ে থাকবে প্রভৃতি শাস্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা, যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদান, শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলাপরায়ণতা প্রভৃতি শাস্তি শিক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী অর্জন করে।
শান্তি শিক্ষা এমন এক সুপরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা যার মধ্যে শিক্ষণীয় সমস্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। সাহিত্য থেকে বাণিজ্য, বিজ্ঞান থেকে দর্শন সবই শাস্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় বলা যায়, শান্তি প্রতিষ্ঠার সমস্ত উপকরণ, আলোচনা, প্রচেষ্টা, মাধ্যম, হাতিয়ার সবই শান্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।
শাস্তি শিক্ষার গুরত্ব:
শিশু নীতিপরায়ণ হয়ে জন্মায় না। অন্যান্য প্রাণীর মতো তার কতকগুলি স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে। তার এইসব প্রবণতা বা প্রবৃত্তি সবসময় সমাজ অনুমোদিত আদর্শের মধ্যে পড়ে না। সুতরাং তার বহুবিধ জৈব প্রবৃত্তিকে শিক্ষার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তার আদিম প্রবৃত্তিগুলির মধ্যে উদ্ধৃতিসাধন করে তার মধ্যে চারিত্রিক আদর্শের সৃষ্টি করা শিক্ষার একটি অন্যতম দায়িত্ব। শান্তি শিক্ষা ব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী, দয়ালু, পরহিতকারী ও সংযতেন্দ্রিয় হতে সাহায্য করে। তাই অন্য শিক্ষাবিদদের মতো শিক্ষাবিদ হার্বাট বিশ্বাস করেন জীবনের প্রধান মূল্য হল নৈতিক মূল্য এবং শান্তি শিক্ষাই এই মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে পারে।
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও যেখানে সর্বদা হিংসা, বিদ্বেষ, রাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ, বেকারত্ব প্রভৃতির উসকানি ব্যক্তি এবং সমাজকে ধ্বংসের মুখে এগিয়ে নিয়ে চলে, যেখানে শান্তি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় UNO বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। UNO-এর বিভিন্ন Sister Organization যেমন-UNICEF, UNESCO, WHO প্রভৃতি সংস্থা শান্তির বাতাবরণ তৈরিতে নিযুক্ত।
বর্তমানে আদর্শহীনতা, দুর্নীতির প্রসার, সন্ত্রাসবাদ, সামাজিক ও নৈতিক অবমূল্যায়ন পৃথিবীর সব দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও শিক্ষাবিদদের গভীর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাপান বর্তমানে শান্তি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে। ইংল্যান্ড এ ব্যাপারে গভীর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। আমেরিকাও তার দেশের ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতার জন্য শান্তি শিক্ষার সূত্রপাতের কথা ভাবছে।
সামাজিক দায়দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ, সততা, নির্লোভ স্বভাব, পারস্পরিক ভালোবাসা, মূল্যবোধ, সৌভ্রাত্র, নিয়মনিষ্ঠা ইত্যাদির বর্তমানে অভাব দেখা দিয়েছে। উক্ত বিভিন্ন নৈতিক দায়িত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে শাস্তি শিক্ষা বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে |
প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দেশের পাঠক্রমে শাস্তি শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকলেও প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এমন কিছু বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নৈতিক দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়, যেগুলি শান্তি শিক্ষারই অঙ্গ। একজন নীতিপরায়ণ ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনৈতিক নেতা সমাজকল্যাণে সহায়ক হতে পারে। নীতি-জ্ঞানহীন ব্যক্তি যতই উচ্চশিক্ষিত হন তিনি সমাজের বিষফোড়া স্বরূপ। এ সম্বন্ধে খুব পরিষ্কারভাবে ডঃ সর্বপল্লি
রাধাকৃষ্মণ বলেছেন-“We are building a civilisation, not a factory or workshop. The quality of civilisation depends not on the material equipment but on the character of men.”