একটি শিশু পৃথিবীতে জন্ম নেয় কাদামাটির মতো নরম হয়ে। পরিবার ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে তার বিকাশ ঘটে। শিশুর অন্যসব বিকাশের মতো ভাষা বিকাশেও এগুলো প্রত্যক্ষ প্রভাব রাখে। কোনো শিশুর ভাষা বিকাশে বিলম্ব হলে বা কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই ধারণা করা হয় শিশুটির অভ্যন্তরীণ কোনো ত্রুটি রয়েছে- যা অনেক ক্ষেত্রে সত্যিও হয়। কিন্তু শিশুর সুস্থ সাবলীল ভাষা বিকাশ সাধারণত তার পরিবার ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে।
শিশুরা ভাষা শিখে শুনে শুনে। শিশু যখন সর্বপ্রথম কোনো কিছু শোনে, মূলত সেই মুহূর্ত থেকেই তার ভাষার বিকাশ শুরু হয়ে যায়। শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার চারপাশের সব শব্দ গ্রহণ করে। শিশুর ভাষা বিকাশ শুরু হয়ে যায় মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই। গর্ভাবস্থার ১৮ সপ্তাহের ভেতরেই শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা তৈরি হয়। এ সময়ে শিশুরা বাইরের শব্দ শুনতে পায়। গর্ভাবস্থার ২৪ সপ্তাহে মাতৃগর্ভে শিশু শব্দের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল হয় এবং প্রতিক্রিয়া করে। এই সময় থেকেই শিশুর সঙ্গে কথা বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র জন্মগ্রহণ করা শিশুও তার মাতৃভাষা এবং অজানা কোনো ভাষার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে।
কারণ মায়ের গর্ভে থাকাকালীনই সে তার মাতৃভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। একটি শিশু পরিপূর্ণভাবে ভাষা আয়ত্ত করে পাঁচ বছর বয়সে। তবে শিশুর ভাষা বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় তথা মূল ভিত্তি হলো জন্মের পর প্রথম দুই বছর। এ সময় শিশুর সঙ্গে সঠিক উচ্চারণে স্পষ্টস্বরে কথা বলুন। শিশুর সামনে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের কথা বর্ণনা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে শিশু কী করছে, তা শিশুকে শুনিয়ে শুনিয়ে বর্ণনা করুন। এ ছাড়াও, গল্পের বই পড়ে শোনানোর মাধ্যমেও শিশুর ভাষা বিকাশে সহায়তা করা যায়। এসব পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি শিশুর সঙ্গে কথোপকথনের সময় যতটুকু সম্ভব আঞ্চলিকতা পরিহার করুন।
শিশুর বাক্য গঠনে ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক, সে ক্ষেত্রে ভুলের কথা সরাসরি না বলে শিশুর বলা বাক্যটি মজারছলে সঠিকভাবে পুনরাবৃত্তি করুন। মনে রাখতে হবে যে, শিশুরা সবচেয়ে বেশি শেখে অনুকরণের মাধ্যমে। শিশুর সঙ্গে কথা বলার সময় বা প্রশ্ন করার সময় শিশুকে কিছু বলার সুযোগ দিন। শিশুর সঙ্গে হাস্যকর বিকৃত উচ্চারণে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। মনে করা হয় এতে শিশু আনন্দ পায়। কিন্তু এতে করে শিশুর শুদ্ধ উচ্চারণ শিখতে দেরি হয়, অনেক সময় বড় হওয়ার পরেও এই সমস্যা থেকে যায়। পিতামাতা ও পরিবারের সদস্যদের সচেতনতাই শিশুর সুস্থ স্বাভাবিক ভাষা বিকাশের প্রধান শর্ত।