সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা দাও
মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একা বাস করতে পারে না। সমাজেই মানুষের জন্ম, সমাজই তার লালনপালন করে। এজন্য মানুষ দলবদ্ধভাবে সমাজে বসবাস করে। আর এ সমাজকে নিয়েই আলোচনা করে সমাজবিজ্ঞান। তাই বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান মানুষের সামাজিক কর্মকান্ডের বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানে মানুষের দলগত আচরণ, পারস্পরিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে পাঠ করা হয়। কীভাবে মানুষের সমাজে নানাবিধ সংঘের বিকাশ ঘটছে এবং কীভাবে সমাজের অভ্যন্তরে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এসবই সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত গোটা সামাজিক সম্পর্কটাই সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যবিষয়। সমাজবিজ্ঞান একদিকে যেমন আদি মানবচিন্তার মতোই প্রাচীন, অন্যদিকে দৈনন্দিন সংবাদপত্রের মতোই নতুন। তাই সমাজবিজ্ঞানের স্বতন্ত্র সর্বজনীন কোনো সংজ্ঞা গড়ে উঠেনি।
যে শাস্ত্র সমাজের মানুষের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, আচার-আচরণ, রীতিনীতি, ধ্যানধারণা প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে তাকেই সমাজবিজ্ঞান বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বিজ্ঞানের যে শাখায় সমাজ সম্পর্কে অধ্যয়ন ও গবেষণা করা হয় তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে।
ল্যাটিন শব্দ ‘Socious’ এবং গ্রিক শব্দ ‘Logos’-এর সমন্বয়ে ইংরেজি ‘Sociology’-র উৎপত্তি। ‘Socious’-এর অর্থ সমাজ, আর ‘Logos’-এর অর্থ জ্ঞান। তাই ‘Sociology’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে সমাজের জ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের মূল উপাদ্য বিষয় সমাজ। অর্থাৎ সমাজ মানুষ নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে।
সংস্তন্ত্র: বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো: ডারখেইমের (Durkheim) মতে, “সমাজবিজ্ঞান হলো অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।” বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার (Maciver) তাঁর ‘Society’ প্রশ্নে বলেছেন, “সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান, যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে পাঠ করে।”
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার (Maciver) and পেজ (Page) বলেছেন “সমাজবিজ্ঞানের অনুশীলনের বস্তু হলো মানুষের সামাজিক সম্পর্কের সামগ্রিক রূপ।”
প্রখ্যাত আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর মতে, “সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক কার্যাবলির অধ্যয়ন।”
প্রখ্যাত আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী সিমেল (Simmel) এর মতে, “সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান, যা মানব সম্পর্কে অধ্যয়ন করে।”
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সমাজবিজ্ঞানের Prof. Neil. J. Smelser তাঁর ‘Sociology’ (1981: 500) গ্রন্থে বলেছেন, “সমাজবিজ্ঞান এমন একটি অভিজ্ঞতা বা গবেষণানির্ভর বিজ্ঞান, যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে অধ্যয়ন করে।”
দ্য স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ জার্সির সমাজবিজ্ঞানের Prof, David Popenoe তাঁর ‘Sociology’ (1986: 4) গ্রন্থে বলেছেন, “সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক আচরণ, সমাজের সুশৃঙ্খল এবং বস্তুনিষ্ঠ অধ্যয়ন।”
সংক্ষেপে সমাজবিজ্ঞান বলতে আমরা বুঝি যে শাস্ত্র যার আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাজের গঠনপ্রণালী, পরিবর্তনশীল রাজকাঠামো, সমাজস্থ মানুষের আচার-আচরণ, কার্যাবলি, প্রথা প্রতিষ্ঠান তথা সমগ্র সমাজের স্বরূপ প্রতিফলিত হয়।