সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।

সমাজতত্ত্ব হলো সমাজবিজ্ঞানগুলির মধ্যে নবীনতম। সমাজতত্ত্বের মূল বিষয় হলো ব্যক্তি ও সমাজ। সমাজ সম্পর্কিত আলোচনার সূচনা অনেক আগে হলেও ‘সমাজতত্ত্ব’ বা ‘Sociology’ শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন ফরাসি চিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁত 1839 সালে।

সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা: সমাজতত্ত্বের ইংরেজি সমার্থক ‘Sociology’ যা ল্যাটিন শব্দ ‘Socius’ ও গ্রিক শব্দ ‘logos’-এর মিশ্রণে তৈরি। ‘Socius’-এর অর্থ সমাজ এবং ‘logos’-এর অর্থ জ্ঞান। অতএব sociology বা সমাজতত্ত্বের

• সমাজতত্ত্ব’ শব্দটি প্রথম অগাস্ট কোঁত প্রয়োগ করলেও বিষয় হিসেবে সমাজতত্ত্ব জনপ্রিয়তা পায় আরও তিনজন সমাজবিদের প্রচেষ্টায়। এঁবা হলেন হার্বাট স্পেনসার, এমিল ডু্যুরশেইম ও ম্যাক্স ওয়েবার। এই চারজন সমাজতাত্ত্বিক পরিশীলিত ব্যাখ্যা প্রদানে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এঁদের একত্রে ‘সমাজতত্ত্বের পথপ্রদর্শক’ বা ‘সমাজতত্ত্বের জনক’ বলা হয়।

• বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক সমাজতত্ত্ব বিষয়ে বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন- ও নিমকফ-এর মতে- সমাজতত্ত্ব হলো সমাজ জীবন সম্পর্কিত জ্ঞান”। বার্জেস-এর মতে- “সমাজতত্ত্ব হলো সমষ্টিগত আচরণের বিজ্ঞান”। অগবার্ন পার্ক ও

• এই সংজ্ঞাগুলিকে বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে এটা বলা যায় সামাজিক বিজ্ঞানের যে শাখা ব্যক্তি ও সমাজ এবং যাবতীয় সামাজিক বিষয়কে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে আলোচনা করে তাকে সমাজতত্ত্ব বলে।

• সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার বিকাশ: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনায় ভারতবর্ষে ‘সমাজতত্ত্ব’ বিষয়টি কিছুটা দেরিতে অনুমোদন পেলেও এখানে সমাজ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বহুদিন আগে।

• অনেক আগে থেকে মানুষ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে এসেছে। প্রথম দিকে অল্প বুদ্ধির কারণে মানুষ এই সকল প্রাকৃতিক শক্তিকে সমীহ করত। ক্রমে সে এই সব প্রাকৃতিক শক্তিকে জানার পাশাপাশি তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছে। ফলে উৎপত্তি হয়েছে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহের। অন্যদিকে কেবলমাত্র সমাজ ও তার নানাবিধ সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয় উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। অবশেষে 1839 সালে ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁত ‘সমাজতত্ত্ব’ নামক বিষয়টির জন্ম দেন।

• উনবিংশ শতাব্দীতে সমাজতত্ত্বের উদ্ভব ও তার ক্রমবিকাশের জন্য ইয়ান রবার্টসন তাঁর ‘Sociology’ গ্রন্থে ওটি বিষয়ের কথা বলেছেন, যেমন- (ক) ঔপনিবেশিকদের ভূমিকা। (খ) শিল্পবিপ্লব ও শিল্পায়ন। (গ) প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিকাশ ও প্রাপ্ত প্রেষণা।

(ক) ঔপনিবেশিকদের ভূমিকা: সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইউরোপীয় নাবিকরা দেশ-দেশান্তরে যাত্রা শুরু করেন। পর্যটকদের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের সমাজ সম্পর্কে প্রাপ্ত নানা তথ্য (যেমন-উক্ত সমাজের জীবনযাত্রা, বীতিনীতি প্রভৃতি) ইউরোপের চিন্তাবিদদের ইতিহাস চর্চায় আগ্রহী করে যা ক্রমশ সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারা গড়তে সাহায্য করে।

(খ) শিল্পবিপ্লব ও শিল্পায়ন: অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব ইউরোপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। এর ফলে ক্রমশ নতুন নতুন নগরের উৎপত্তি হয় এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে একটি স্বতন্ত্র সমাজবিজ্ঞানের দরকার হয়।

(গ) প্রাকৃতিক বিজ্ঞনের বিকাশ ও প্রাপ্ত অনুপ্রেরণা: উনবিংশ শতাব্দীতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের চর্চায় বিশেষ উন্নতি হয়েছিল, যা সামাজিক চিন্তাবিদদের মনে সমাজ সম্পর্কিত আলোচনা, গবেষণা ও বিশ্লেষণে শক্তি জুগিয়েছিল।

মন্তব্য: দীর্ঘদিনের সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শুরু হয় সমাজতত্ত্বের চর্চা। আধুনিক যুগে অর্থাৎ ঊনবিষ শতাব্দীর শেষভাগে মানুষের মনে যখন বৈজ্ঞানিক চর্চার প্রতি আগ্রহ জাগে, তখন সমাজ সম্পর্কে যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার স্বার্থে সমাজতত্ত্ব’ নামক বিষয়ের জন্ম।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading