সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী আন্দোলনের ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে; নারীবাদী আন্দোলন ও নব্য বামধারা আন্দোলনের প্রশাখা হিসেবে উত্থান ঘটে। পিতৃতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে যে সংযোগ তার উপরই মুল দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল এই নবধারার আন্দোলন।
সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী কার্যাবলী:
নারীর স্বাধীনতা অর্জনের কারণ হিসাবে চাওয়া ছিল, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচারের যাতে যুগপৎ মিলন হয়। সমাজতান্ত্রিক নারীবাদীরা এই আন্দোলনকে দেখেছিলেন, সামাজিক বিচারের ক্ষেত্রে যাতে পুরুষের আধিপত্যের অন্ত হয়।
শিকাগো উইম্যান লিবারেশন ইউনিয়ন
শিকাগো উইম্যান লিবারেশন ইউনিয়ন সাধারণত সি.ডব্লিউ.এল.ইউ নামে পরিচিত। এটি ১৯৬৯ যালে প্যালেস্টাইন ইলিনয়ের সভার পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন নাওমি উয়েস্টেইন, ভিভিয়ান রোথস্টেইন, হিদার বুথ এবং রুথ সার্গাল। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল লিঙ্গ বৈষম্য ও যৌনতায় প্রাধান্য দূরীভূত করা। একে সি.ডব্লিউ.এল.ইউ সংজ্ঞায়িত করেছে এই বলে যে, “পুরুষ তার নিজের সুবিধার জন্য প্রায়োগিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীকে নিচু শ্রেণীতে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে এই অভিব্যক্তি প্রকাশের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এটা দেখানো যে, “নারীর অবস্থান সমাজে পরিবর্তন করা অতটা সহজ নয়” এর জন্য প্রয়োজন সমাজে নারী শিক্ষা, শিশুর যত্ন এবং তার চাকরির সুবিধা বাস্তবায়ন করা সি.ডব্লিউ.এল.ইউ এক দশক ধরে চেষ্টা চালিয়েছে, শ্রেণী বৈষম্য ও যৌনপ্রাধান্য দূরীভুত করার। এই গ্রুপটি ১৯৭২ সালের পুস্তিকা “Socialist Feminism: নারীর আন্দোলনের কৌশলের” জন্য প্রখ্যাত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, প্রকাশনা জগতে এরাই প্রথম সমাজতাত্ত্বিক নারীবাদী (socialist feminism) পরিভাষাকে ব্যবহার করেছিল।
সি.ডব্লিউ.এল.ইউ অন্যান্য অনেক সংগঠনের মিলিত রুপ হিসেবে কাজ করেছে; যেখানে কর্মীয় শ্রেণির অনেক গ্রুপ একতাবদ্ধ ছিল। প্রতিটা গ্রুপের প্রতিনিধি রাজনীতি ও কৌশল ঠিক করতে ও একমত হওয়ার প্রয়াসে মাসে একবার করে মিলিত হত। তারা নারী সংক্রান্ত অনেক গুলো বিষয়, যেমনঃ নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক অধিকার, জন্মদানের সময় অধিকার, সংগীত, খেলাধুলা, সমকামী নারীদের অধিকার এবং আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করত।
উইম্যান ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট কন্সপাইরেসি ফ্রম হেল
ওম্যান ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট কন্সপাইরেসি ফ্রম হেল (ডব্লিউ. আই. টি. সি. এইচ) ছিল অনেক স্বাধীন নারীবাদী গ্রুপের মিলিত গ্রুপ। যা ১৯৬৮/১৯৬৯ এর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত হয়। এরা সামাজিক নারীবাদীর (socialist feminism) ক্রমবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ডব্লিউ. আই. টি. সি. এইচ দ্বারা কখনো কখনো “উম্যান ইন্সপায়ার্ড টু টেল দেয়ার কালেক্টভ হিস্ট্রি, উম্যান ইন্টারেস্টেড ইন টপলিং কনসিউমার হলিডেইজ এবং বিভিন্ন নাম বুঝানো হত।
কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন ছিল না। প্রত্যেক ডব্লিউ. আই. টি. সি. এইচ গ্রুপ ছিল স্বতন্ত্র, যেখানে প্রত্যেকে তাদের স্বাধীন ভাবনা প্রকাশ করতে পারত। তাদের কর্মকান্ড অনেকটা গেরিলা থিয়েটারের অংশ বা প্রতিরোধের মত ছিল; যেখানে তারা পথ নাটক ও প্রতিবাদকে মিশেল করে নাটক প্রদর্শন করত। তারা হাসি মজাচ্ছলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করত এবং সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ডাইনী হিসেবে অভিযোগ উত্থাপন করত; তাদের অভিশাপ দিত।
১৯৬৮ সালে হ্যালোয়িনে ডব্লিউ.আই.টি.সি.এইচ এর সদস্যরা ওয়াল স্ট্রিটে চেজ ম্যানহাটন ব্যাংকের সম্মুখে “অভিশাপ” দিতে থাকেন। তারা ভয়ংকর মেকাপ দিয়ে এগুলো করেন। ১৯৬৮ এর ডিসেম্বরে ডব্লিউ.আই.টি.সি.এইচ হাউজ আন-আমেরিকান ও দ্য শিকাগো এইট উভয়কে আক্রমণ করে বলতে থাকে তারা শুধুমাত্র পুরুষকে যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের নেতা বানিয়ে রেখেছেন। ১৯৬৯ সালে ডব্লিউ.আই.টি.সি.এইচ. একটি বিবাহে কালো কাপড় পরিধান করে ঝামেলা তৈরী করে। এই বিষয়টি মিডিয়ায় নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হয়; যা নিয়ে সেখানকার সদস্যদের মধ্যে মতভেদ তৈরী হয়। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারীতে, ওয়াশিংটনে, সিনেটে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে শুনানীর সময় কোভেন (ডব্লিউ.আই.টি.সি.এইচ এর চাপ্টারকে কোভেন বলা হয়) আন্দোলন শুরু করে। তারা টেক্সাস সিনেটর রাল্ফ ইয়ারবোরাফের এজহারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং নানা চেচামেচি ও পিল প্যানেল সদস্য ও দর্শক সারির উদ্দেশ্যে ছুড়তে থাকে। স্পিণ অব কোভেন শিকাগো, ইলিনইস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ডব্লিউ.আই.টি.সি.এইচ এর সদস্যরা প্রত্যক্ষ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।