সম্রাট শাহজাহানের আমলে স্থাপত্যশিল্পের উন্নতির বর্ণনা দাও।

উপস্থাপনাঃ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাদা খুররম ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরােহণ করেন। তার আমলেই মুঘল স্থাপত্যশিল্পের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। তার শাসনকালে নির্মিত স্থাপনাসমূহের সৌন্দর্যে মােহিত হয়ে ঐতিহাসিকগণ তাকে The prince of builders বা Engineer king বলে অভিহিত করেছেন।

সম্রাট শাহজাহানের আমলে স্থাপত্যশিল্পের উন্নতি :

১. তাজমহলঃ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সমাধি সৌধ তাজমহল সম্রাট শাহজাহানের অবিস্মরণীয় কীর্তি। সম্রাট শাহজাহান স্বীয় প্রিয়তমা পত্নী মমতাজের স্মৃতি চির অম্লান করে রাখার উদ্দেশে আগ্রার নিকটবর্তী যমুনা নদীর তীরে তাজমহল নামক পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য এ স্মৃতিসৌধ (১৬৩২ – ১৬৫৩) নির্মাণ করে ইতিহাসে আজও অমর হয়ে আছেন। এ তাজমহল নির্মাণ করতে বিশ হাজার শ্রমিকের বাইশ বছর সময় লেগেছিল। এতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় তিন কোটি স্বর্ণমুদ্রা। ওস্তাদ ঈসা নামক জনৈক সুনিপুণ স্থপতির তত্ত্বাবধানে স্থাপত্যশিল্পের রাণী তাজমহলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। পত্নী প্রেমের অমর নিদর্শন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ এ স্মৃতি সৌধ সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-

এক বিন্দু নয়নের জলে

কালের কপােল তলে

শুভ্র সমুজ্জ্বল

এ তাজমহল

২. শাহজানাবাদঃ সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহানাবাদ নামক নতুন রাজধানী নির্মাণ তার অপূর্ব স্থাপত্য শিল্পানুরাগের পরিচয় বহন করে। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ব্রাইন বলেন, “এটি মুঘল নগরীগুলােকে শ্বেত পাথরে মুড়ে দিয়ে গেছে।

৩. দিওয়ানে খাসঃ সম্রাট শাহজাহানের স্থাপত্যানুরাগের আরেক উজ্জ্বল নিদর্শন দিওয়ানে খাস। বহু মূল্যবান পাথরে খচিত দিওয়ানে খাস নির্মাণ করে তিনি নিজেই মন্তব্য করেন, “যদি পৃথিবীর কোথাও স্বর্গ থাকে তাহলে এ দিওয়ানে খাস তার যােগ্যতম স্থান।

৪. ময়ূর সিংহাসনঃ দিওয়ানে খাসে স্থাপিত ময়ূর সিংহাসন নামে রাজকীয় সিংহাসন শাহজাহানের এক অমর কীর্তি। প্রায় সাত বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আট কোটি মুদ্রা ব্যয়ে ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে শিল্পাধ্যক্ষ বেবাদেল খানের তত্ত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এর প্রত্যেক স্তম্ভের মাথায় মণিমুক্তা খচিত এক জোড়া ময়ুর মুখােমুখি বসানাে ছিল। পারস্য সম্রাট নাদের শাহ ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করে এ ময়ূর সিংহাসনটি ছিনিয়ে নিয়ে যান। বর্তমানে ইংল্যান্ডের মহারাণী এ সিংহাসনটিতে উপবেশন করে থাকেন।

৫. মতি মসজিদঃ আগ্রার দুর্গের নিকট শ্বেত পাথরে নির্মিত মতি মসজিদ আজও দর্শকদের বিস্ময়ের উদ্রেক করে। এরূপ অপরূপ মসজিদ পৃথিবীর আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। এর নির্মাণ কার্যে খরচ হয় প্রায় ত্রিশ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা। এ মসজিদের আয়তন দৈর্ঘ্যে ২৩৪ ফুট এবং প্রস্থে ১৮০ ফুট। ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়।

৬. মুসাম্মাম বুরুজঃ শাহজাহান অগ্রি দুর্গের অভ্যন্তরে মুসাম্মাম বুরুজ নামে অপূর্ব সুন্দর একটি প্রকোষ্ঠ তৈরি করেন। এ মুসাম্মাম বুরুজে শুয়ে তাজমহলের দিকে তাকিয়ে শাহজাহান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৭. দিল্লীর জামে মসজিদঃ শাহজাহানের নির্মিত অপর একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকীর্তি হচ্ছে দিল্লীর জামে মসজিদ। পাঁচ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মিত নয়নাভিরাম এ মসজিদটি স্থাপত্য সৌন্দর্যের স্বাক্ষর বহন করে।

৮. শালিমার উদ্যানঃ সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক ১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে লাহােরে নির্মিত শালিমার উদ্যান আজও দর্শকদের পুলকিত করে। শাহজাহান লাহােরে অবস্থানকালে এ উদ্যানে অবস্থান করতেন।

৯. শীশমহলঃ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সুশােভিত রাজকীয় এ আবাসগৃহটি স্থাপত্যশিল্পে শাহজাহানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এ মহলটি নির্মাণ করেন। অপরূপ কারুকার্য খচিত শীশমহলের সৌন্দর্য সম্রাটের উন্নত রুচির পরিচয় বহন করে।

১০. খাসমহলঃ তিনি আগ্রা দুর্গের মাঝখানে অন্যান্য মহলের ন্যায় একটি খাসমহলও নির্মাণ করেন। যা তার স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বলতম নিদর্শন।

১১. লালকেল্লাঃ সম্রাট শাহজাহান নতুন রাজধানী দিল্লীতে সুরক্ষিত লাল কেল্লানির্মাণ করেন। লালকেল্লার অভ্যন্তরে দিওয়ানে আম, দিওয়ানে খাস এবং মমতাজ মহল নামক প্রাসাদ অবস্থিত। এ প্রাসাদটি অলঙ্কারে ভূষিত ছিল। এর প্রবেশদ্বারে ফারসিতে লেখা ছিল ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading