ওই যে দূরের সবুজ গ্রামটা৷ সেখানে বিশাল ছাতার মতো একটা অশ্বত্থ আছে৷ কী ছায়া সুনিবিড় শান্ত শ্যামলিমায় ঢাকা সব কিছু৷ গ্রীষ্মের উষ্ণ দুপুরে সবটুকু প্রশান্তি যেন সেখানে ছড়িয়ে রাখে৷ গাছটির চারপাশ মাঠের মতো সমতল৷ বৈশাখে ওখানে সপ্তাহব্যাপী মেলাবসে৷ গ্রামের মানুষ জায়গাটির নাম রেখেছে কালিতলা৷ মেলা শুরু হওয়ার মাসখানেক আগেই গ্রামে প্রস্তুতি শুরু হয়৷ পাশের গ্রামগুলোতে কামার, কুমার, ছুতার, দোসাইদ, তাঁতি সবাই ব্যস্ত সময় পার করে৷ ওদিকে যাত্রাদল, গায়কদল, কবিয়াল – এঁদেরও দু’দণ্ড সময় নেই৷ নতুন নতুন যাত্রাপালার পরিকল্পনা নিয়েই সময় কাটে তাঁদের৷ চারদিকে কেমন উৎসবের আমেজ৷ সব বয়সি মানুষ অপেক্ষা করে মেলার জন্য৷ বৈশাখে গ্রাম বাংলায় এমন দৃশ্য বিরল নয়৷ আর বছরের শুরুতেই বাংলা বর্ষবরণকে কেন্দ্র করেই এই জনপদে সবচেয়ে বেশি মেলার আনুষ্ঠানিকতা চোখে পড়ে৷ সময়ের বিবর্তনে শুধু মেলার আনুষ্ঠানিকতায় কিছু পরিবর্তন এসেছে বৈকি৷ আবার সংখ্যায়ও যে কিছুটা কমেছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়৷
আসলে এই জনপদে মেলা একটি উপলক্ষ্য মাত্র৷ মেলাকে ঘিরে যে আয়োজন তা বহুধা বিস্তৃত এবং বর্ণাঢ্যতায় ভরা৷ শেকড়ের এসব বিনোদন যুগ যুগ ধরে আমাদের সাংস্কৃতিক ধারাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে৷ মেলার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ যাত্রাপালা৷ রাত একটু গভীর হলেই শুরু হতো যাত্রানুষ্ঠান৷ একসময় জনপ্রিয় ছিল রহিম রূপবান, সিরাজউদ্দৌলা৷ কোথাও কোথাও বসত পালা গানের আসর৷ তবে যে কোনো লোকজ মেলায় নাগরদোলা এখনো অনিবার্য৷ মেলায় সব ধরনের পণ্যই সহজলভ্য৷ একটা সময় ছিল যখন মানুষ পণ্য আদান-প্রদানের প্রধান মাধ্যম হিসেবে মেলাকেই বেছে নিয়েছিল৷ সময়ের বিবর্তনে সেসব এখন বদলে গেছে৷ তবুও মেলা কেন্দ্রিক উৎসবের আমেজ এখনো কোথাও কোথাও লক্ষ্য করা যায়৷ দেশের উত্তর জনপদে কোনো কোনো মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করা হয় নাইওরি নেবার জন্য৷ মেলা উপলক্ষ্যে বিশেষত মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়৷ নতুন জামা-কাপড় দেওয়া হয়৷ এটা কোনো কোনো এলাকার আঞ্চলিক রীতি৷