সাক্ষাৎকার গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো।

আক্ষরিক অর্থে সাক্ষাৎকার হচ্ছে Mutual view of each other’। একে উদ্দেশ্যমূলক কথোপকথন (Conversation with a purpose) বলেও অভিহিত করা হয়। কোন বিষয়ে উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মুখোমুখি অবস্থায় (Face to face situation) কথোপকথনকে সাক্ষাৎকার বলে। এটি মূলত একটি মিথস্ক্রিয়ারত প্রক্রিয়া (Interactional process)। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গবেষক সাক্ষাৎদানকারী ব্যক্তি বা দলের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য (Information) বের করে আনেন। এটি উপাত্ত সংগ্রহের একটি সরাসরি কৌশল। মানব আচরণ অধ্যয়নে উপাত্ত সংগ্রহে সাক্ষাৎকার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। সমাজ গবেষকগণ সাক্ষাৎকারকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে সাক্ষাৎকারের কতিপয় উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :

ফ্রেড. এন. কার্লিনজার (Fred. N. Kerlinger) এর মতে:


“The interview is a face-to-face interpersonal role situation in which one person, the interviewer, asks a person being interviewed, the respondent, questions designed to obtain answers pertinent to the research 80 problem.” ” অর্থাৎ, সাক্ষাৎকার হলো মুখোমুখি একটি আন্তঃব্যক্তিক পরিস্থিতি যেখানে একজন ব্যক্তি সাক্ষাগ্রহণকারী, আর এক ব্যক্তিকে (উত্তরদাতা), গবেষণার সমস্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সজ্জিত প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন।

সি এ মোজার এবং গ্রাহাম কালটন এর মতে:

“Interview is an conversation between interviewer and respondent with the purpose of eliciting certain information from the respondent.” অর্থাৎ সাক্ষাৎকার হচ্ছে উত্তরদাতার নিকট থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য (Information) বের করে আনার উদ্দেশ্যে সাক্ষাগ্রহণকারী এবং উত্তরদাতার মধ্যে কথোপকথন।

Goode and Hatt এর মতে:


“Interviewing is fundamentally a process of social interaction.” অর্থাৎ সাক্ষাৎকার হলো মৌলিক সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার একটি প্রক্রিয়া।

সফল সাক্ষাৎকারের প্রয়োজনীয় শর্তাবলি (Necessary Conditions for a Successful Interview):

সামাজিক গবেষণায় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উত্তরদাতার নিকট থেকে সঠিক, নির্ভুল এবং পরিমাপযোগ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা সহজ ব্যাপার নয়। কারণ সাক্ষাগ্রহণকারীর বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা, উত্তরদাতার আগ্রহ, সামর্থ্য ও প্রেষণা এবং সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন মাধ্যমের উপযুক্ততা প্রভৃতি উপাত্ত সংগ্রহের বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এছাড়াও সাক্ষাৎকার উদ্দেশ্যমূলক মুখোমুখি কথোপকথন প্রক্রিয়া হওয়ায় উত্তরদাতা তার চিন্তা, চেতনা, প্রয়োজন, সমস্যা প্রভৃতি ব্যক্ত করতে দ্বিধা ও সংকোচবোধ করেন। উপযুক্ত সম্ভাব্য প্রতিকূল অবস্থাগুলোকে নিরসন করে সফল সাক্ষাৎকারের উপযুক্ত পরিবেশ এবং উত্তরদাতার সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টির উদ্যোগ সাক্ষাগ্রহণকারীকেই নিতে হয়। Cannell and Kahn (Lindzey and Aronson, 1968, Vol. 2] সফল সাক্ষাৎকারের তিনটি অপরিহার্য উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। নিম্নে অপরিহার্য উপাদানগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

সুগমতা (Accessibility):

গবেষক গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক যেসব তথ্য (Information) জানতে চান সাক্ষাৎদানকারীর (উত্তরদাতা) নিকট সেসব তথ্যের সহজলভ্যতা এবং সরবরাহের পথ সুগম থাকতে হবে। অন্যথায় উত্তরদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হন না। নানাবিধ কারণে উত্তরদাতা তথ্যের এ ধরনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পারেন না।

যেমন—

  1. ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে উত্তরদাতার সাময়িক বা সম্পূর্ণ বিস্মৃতি বা ভুলে যাওয়া।
  2. আকোজনিত চাপে তথ্য নিষ্পিষ্ট হওয়া (Repressed information)
  3. অবোধগম্য এবং অস্পষ্ট প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক তথ্য নাও পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সাক্ষাগ্রহণকারীর প্রশ্ন বুঝতে না পারা, উত্তর গুছিয়ে বলতে না পারা এবং ভাষাগত সমস্যা তথ্যের সুগমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশ (Cognitive Condition):


সফ সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎদানকারীকে সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য এবং উপযোগিতা সম্পর্কে সন্তোষজনক পরিচিতি প্রদান করে একটি সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশে সৃষ্টি করা হয়, যাতে সাক্ষাৎদানকারী অত্যন্ত স্বস্তির সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে পারেন। অর্থাৎ গবেষককে সাক্ষাৎদানকারীর নিকট থেকে উত্তর পাওয়ার জন্য তার মানসিক প্রস্তুতি সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষক যত বেশি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন, তত বেশি সঠিক ও পরিমাপযোগ্য উত্তর লাভ করবেন।

Also check : সাক্ষাৎকার গ্রহণ প্রক্রিয়া (Process of Interview)

প্রেষণা (Motivation):


সফল সাক্ষাৎকারের তৃতীয় ও সর্বশেষ অপরিহার্য শর্ত হলো সাক্ষাৎদানকারীর প্রেষণা। অর্থাৎ সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎদানকারীকে বিভিন্নভাবে সাক্ষাৎদানে আগ্রহী করে তুলতে হবে, যাতে উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে তার মধ্যে একটি তাড়না বা প্রেষণার সৃষ্টি হয়। Cannell and Kahn এর মতে, এক্ষেত্রে দু’ধরনের প্রেষণার সৃষ্টি হতে পারে।

যথা—
A. অভ্যন্তরীণ প্রেষণা (Internal Motivation): অভ্যন্তরীণ প্রেষণা সাক্ষাগ্রহণকারীর সাথে উত্তরদাতার সম্পর্কের মাত্রা এবং উত্তরদাতার নিজস্ব অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। এটি উত্তরদাতার অন্তর্নিহিত আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে সে উত্তর প্রদানের জন্য মানসিকভাবে উৎসাহিত হয়।

B. কৌশলগত প্রেষণা (Instrumental Motivation) : সাক্ষাঋণকারীর সাথে উত্তরদাতার নিজস্ব লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ, প্রয়োজন ইত্যাদির মিল বা সামঞ্জস্যের ফলে উভয়ের মধ্যে যে পারস্পরিক স্রেফণার সৃষ্টি হয় তাকে কৌশলগত প্রেষণা বলে। এর ফলে উত্তরদাতা খুব সহজেই তার জানা সকল তথ্য সাক্ষাগ্রহণকারীকে দিতে আগ্রহী হয়।

Cannell and Khan (1975) সামাজিক প্রেক্ষাপটে সাক্ষাৎদানকারী (উত্তরদাতা) এবং সাক্ষাগ্রহণকারীর প্রেষণাজনিত উল্লেখিত অবস্থাকে নিম্নোক্ত ছকের মাধ্যমে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

উত্তম সাক্ষাগ্রহণকারীর গুণাবলি :


সমাজ গবেষণায় উত্তরদাতার নিকট থেকে সরাসরি প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের একটি অত্যন্ত কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে সাক্ষাৎকার। কিন্তু সাক্ষাৎকারের কার্যকারিতা সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু, সাক্ষাগ্রহণকারী, সাক্ষাৎদানকারী, সাক্ষাতের স্থান বা পরিস্থিতি প্রভৃতির উপর নির্ভর করলেও সাক্ষাগ্রহণকারীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিনি সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় পরিচালকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। অর্থাৎ তিনিই সঠিক উত্তরদাতা নির্বাচন এবং সুকৌশলে তার সহযোগিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকেন। এজন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সাক্ষাগ্রহণকারীর অবস্থান সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থানে। সমাজ গবেষণায় সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়াটিকে সফলভাবে সমাধা করার জন্য সাক্ষাগ্রহণকারীর ব্যক্তিগত কতিপয় গুণাবলি থাকা আবশ্যক। বিভিন্ন সমাজ গবেষক তাঁদের বিভিন্ন গ্রন্থে সাক্ষাগ্রহণকারীর অপরিহার্য সাধারণ কিছু গুণাবলির কথা উল্লেখ করেছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading