প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদানগুলি আলোচনা করলে দেখা যায় সাহিত্যিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্যে সুস্পষ্ট কিছু পার্থক্য রয়েছে- • প্রথমত, সাহিত্যিক উপাদানের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের পরিবর্তন আসে না।
প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হওয়া বা ভেঙে যাওয়া ছাড়া তা অপরিবর্তিতই থাকে। যেমন- জাদুঘরে রাখা মুদ্রাগুলি যেমন ছিল, তেমনই আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। শুধু ঐতিহাসিকদের ব্যাখ্যা করার দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়, কিন্তু মূল বিষয়ের কোনোরকম পরিবর্তন ঘটে না।
• দ্বিতীয়ত, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সাধারণত ভুল তথ্য পরিবেশন করে না। সাহিত্যিক উপাদানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু অতিশয়োক্তি থাকে। কিন্তু প্রশস্তিগুলিতে কোনো-কোনো ক্ষেত্রে কিছু অতিশয়োক্তি থাকে বলে মনে হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলিতে উল্লেখিত প্রাসঙ্গিক নানা তথ্য নির্ভুল থাকে।
• তৃতীয়ত, খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু, যথা-দেবদেবীর মূর্তি, মাটির পাত্র, খাদ্যশস্য, ঘরবাড়ি প্রভৃতি সমাজ ও সংস্কৃতির যে ধরনের নিদর্শন তুলে ধরে সাহিত্যিক উপাদানগুলি সেই বিষয়ে অপারগ।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের তুলনায় সাহিত্যিক উপাদানগুলি কম নির্ভরযোগ্য হলেও প্রাচীন ভারতের সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে হলে বা যে-কোনো রাজ্য বা রাজবংশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে হলে এবং তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করতে হলে সাহিত্যিক উপাদানগুলি অপরিহার্য। উভয় উপাদানের সাহায্যেই বর্তমানে আমরা প্রাচীন ভারতের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে পেরেছি।