পঞ্চায়েত সমিতি, যা ব্লক পঞ্চায়েত বা তালুকা পঞ্চায়েত নামেও পরিচিত, ভারতের একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা যা গ্রামীণ এলাকায় ব্লক বা তালুক স্তরে কাজ করে। এটি পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থার একটি মধ্যবর্তী স্তর, যা তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্র এবং স্ব-শাসন আনার লক্ষ্যে শাসনের একটি বিকেন্দ্রীকৃত রূপ।
পঞ্চায়েত সমিতির গঠন:
পঞ্চায়েত সমিতি ভারতীয় স্থানীয় স্বশাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি গ্রামীণ এলাকায় ব্লক বা তালুক স্তরে একটি বানীয় সরকার সংস্থা। নিম্নলিখিত সদস্যদের নিয়ে সমিতি গঠিত হয়, যেমন-
• নির্বাচনি এলাকা থেকে নির্বাচিত সদস্য। পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ব্লক বা তালুকের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় বসবাসকারী লোকজন দ্বারা নির্বাচিত হন। এই সদস্যদের সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়, সাধারণত প্রতি পাঁচ, বছর পরপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সরপণ্ড (গ্রামপ্রধান) রাও সমিতির সদস্য। তাঁরা নিজ নিজ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সিন্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অবদান রাখেন।
• সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সরকার নির্দিও কিছু সদস্যকে পঞ্চায়েত সমিতিতে মনোনীত করতে পারে।
• চেয়ারপারসন। পঞ্চায়েত সমিতির নেতৃত্বে একজন চেয়ারপার্সন থাকেন, যিনি সমিতির সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। চেয়ারপার্সন সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং পঞ্চায়েত সমিতির কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি:
পঞ্চায়েত সমিতি গ্রামীণ এলাকায় গণতান্ত্রিক শাসন এবং তৃণমূল স্তরে উন্নয়নের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিম্ন আলোচনা করা হলো-
• প্রতিনিধি সংস্থা: পঞ্চায়েত সমিতি গ্রামগুলির একটি প্রতিনিধি সংস্থা হিসাবে কাজ করে। এটি প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের এখতিয়ারের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত।
• বিকেন্দ্রীভূত প্রশাসন: পঞ্চায়েত সমিতি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং উচ্চস্তরের কর্তৃপক্ষের মধ্যে শাসনের মধ্যবর্তী স্তর হিসাবে কাজ করে। এটি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কার্যক্রম সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ করে, সরকারি কর্মসূচি ও নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে।
• পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন: পঞ্চায়েত সমিতির প্রাথমিক কাজগুলির মধ্যে একটি হলো তার এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিকল্পনা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা। এটি স্থানীয় পর্যায়ে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, উন্নয়ন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে।
সম্পদ সংহতকরণ: পঞ্চায়েত সমিতির তাদের এখতিয়ারের মধ্যে কর, ফি এবং জরিমানা ধার্য ও আদায় করার ক্ষমতা রয়েছে। তারা উচ্চস্তরের সরকার, অনুদান এবং অন্যান্য উপায়ে অনুদানের মাধ্যমে সম্পদ সংগ্রহ করতে পারে। এই তহবিলগুলি স্থানীয় উন্নয়ন উদ্যোগ এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হয়।
পরিষেবা সরবরাহ। পঞ্চায়েত সমিতিগুলি গ্রামীণ জনগণের কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহের জন্য দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, স্যানিটেশন, জল সরবরাহ, কৃষি, পশুপালন, গ্রামীণ কাঠামো উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি।
• মনিটরিং এবং মূল্যায়ন: পঞ্চায়েত সমিতিগুলি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কার্যকারিতা নিরীক্ষণ করে, তাষের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে। তারা নিয়মিত পরিদর্শন পরিচালনা করে, চলমান প্রকল্পের মূল্যায়ন করে