অথবা, স্বরবৃত্ত ছন্দ কাকে বলে? স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
স্বরবৃত্ত ছন্দ কাকে বলে?
যে ছন্দ রীতিতে উচ্চারণের লয় বা গতিবেগ দ্রুত, যাতে যতি ও শ্বাস পড়ে ঘন ঘন, পর্ব হয় হ্রসতম অর্থ্যাৎ চার মাত্রার, যার প্রতি পর্বের আদিতে একটি প্রবল স্বর বা শ্বাসাঘাত পড়ে এবং যে ছন্দে অক্ষর মাত্রই এক মাত্রার তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দ বলে।
স্বরবৃত্ত ছন্দ কোন ব্যক্তি বিশেষের সৃষ্টি নয়। বাংলা লোক সাহিত্য সুদীর্ঘ কাল ধরে মূলত এই ছন্দেই রচিত হয়ে এসেছে। লোক সাহিত্য বিশেষ করে ছড়ার প্রধান বাহন বলে স্বরবৃত্ত ছন্দের সাথে কথ্য ভাষার আত্মিক যোগ আছে।
নাগের বাঘের / পাহারাতে ৪+৪
হচ্ছে বাদল / দিনে রাতে ৪+৪
পাহাড় তারে / আড়াল করে ৪+৪
সাগর সেথায় / ধোয়ায় পাটি। ৪+৪
স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য :
০১. স্বরবৃত্ত ছন্দের মূল পর্ব হয় চার মাত্রার এর কম বেশি নেই। যেমন
খোকন যাবে / শশুড় বাড়ি /সঙ্গে যাবে / কে
ঘরে আছে / হুলো বিড়াল / কোমর বেধে/ছে
০২. স্বরবৃত্ত ছন্দের মুক্তাক্ষর বা বদ্ধাক্ষর উভয়েই এক মাত্রার হয়। যেমন
থাকব নাকো / বদ্ধ ঘরে / দেখব এবার / জগতটাকে
কেমন করে / ঘুরছে মানুষ / যুগান্তরের / ঘূর্ণিপাকে।
০৩. স্বরবৃত্ত ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান। প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে একটি প্রবল শ্বাসাঘাত থাকে। যেমন
কে বকেছে / কে মেরেছে/ কে দিয়েছে/ গাল
তাই তো খোকা/ রাগ করেছে/ ভাত খায় নি/ কাল
০৪. স্বরবৃত্ত ছন্দের পূর্ণ পর্ব চার অক্ষর হওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু মাঝে মাঝে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন।
ছেলে ঘুমালো/ পাড়া জুড়ালো/ বর্গী এলো/ দেশে
০৫. এ ছন্দে যতি ও ছেদ ও পড়ে ঘন ঘন। এ কারণে বাগ যন্ত্রে ক্ষিপ্রতা আসে।
বাবুদের/ তাল পুকুরে
হাবুদের/ ডাল পুকুরে
সে কি বাস/ করল তাড়া
বলি থাম/ একটু দাড়া
০৬. দ্রুত লয়ের জন্য এ ছন্দে যুক্ত ব্যঞ্জনে সংশ্লিষ্ট উচ্চারণ হয়। যেমন..
কাপিয়ে পাখা / নীল পতাকা / জুটলো অলি/কুল
০৭. এ ছন্দে সাধারণত কথ্যরীতির ক্রিয়াপদের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন
বুলবুলিতে/ ধান খেয়েছে/ খাজনা দেবো/ কিসে।
০৮. স্বরবৃত্ত ছন্দে গাম্ভীর্যের প্রাচুর্যতা নেই।
০৯. এ ছন্দে লঘু চপল ভাব প্রকাশের উপযোগী।
১০. স্বরবৃত্ত ছন্দ বাংলা কবিতার ঘরোয়া ছন্দ ছড়ার ছন্দে এর মূল নিহিত। যেমন
খোকা যাবে / নায়ে
লাল জুতুয়া / পায়ে
পাঁচশ টাকার / মলমলি থান
সোনার চাদর / গায়ে।