বর্তমান ভারত ও পাকিস্তানের এক বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। পাঞ্জাব, সিন্ধু, বালুচিস্তান, গুজরাট, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অংশের কিছু অঞ্চল জুড়ে এই সভ্যতা বিরাজ করেছিল। যেসব নদীগুলির অববাহিকায় এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তা দৈর্ঘ্যে প্রায় 1350 কিমি এবং প্রস্থে 1050 কিমি। এই সভ্যতা অধিকৃত ভূখণ্ডের আকার ছিল এক বিরাট ত্রিভুজের মতো, যার আয়তন প্রায় 12,99,600 বর্গকিমি। 1954 সালে গর্ডন চাইল্ড লিখেছেন, হরপ্পা সভ্যতার পরিধি মিশরীয় সভ্যতার পরিধির দ্বিগুণ এবং সুমেরীয় সভ্যতার পরিধির চারগুণ। ইরফান হাবিব-এর মতে, এই সভ্যতার বর্তমান পরিধি 7,00,000 বর্গকিমি।
হরপ্পা সভ্যতাকে কোনোমতেই স্থানীয় বা আঞ্চালিক বলা যায় না। এমনকি এই সভ্যতা ক্ষুদ্র ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবন্ধ ছিল না। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে হরপ্পা সভ্যতার দিগন্ত ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। ফলে পরিত্যক্ত হচ্ছে পুরাতন মতামত ও আগেরকার বহু ধারণা। সিন্ধু প্রদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ননীগোপাল মজুমদার এই প্রদেশের বহু স্থানে এই সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। স্যার অরেলস্টাইন উত্তর ও পশ্চিম বালুচিস্তানেও এর অস্তিত্ব লক্ষ করেন। বক্সার ও পাটনার নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্যসূচক টেরাটোকার আবিষ্কার থেকে প্রমাণিত হয়, উত্তর ভারতের প্রায় সমগ্র গাঙ্গেয় উপত্যকায় এই সভ্যতার বিস্তার
ঘটেছিল। 1947 সালে ভারত বিভাগের সময় হরপ্পা সভ্যতার মাত্র 4০টি কেন্দ্রের কথা আমরা জানতাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় 1500টি কেন্দ্রের কথা আমরা জানতে পেরেছি। হরপ্পা সভ্যতার বিশাল অঞ্চলকে তিনটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে-① মহেন-জো-দারো, ② হরপ্পা ও ③ চানহুদাড়ো। ভি এস আগরওয়াল-এর মতে, সিমলা পাহাড়ের পাদদেশে রোপার নামক স্থান থেকে শুরু করে দক্ষিণ নর্মদা ও তাপ্তী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল জুড়ে এবং আরবসাগর তীরবর্তী সুতকাজেনদোর পর্যন্ত অঞ্চল জুড়ে হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। অধিকাংশ প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে, উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীরের মান্ডা ছিল এই সভ্যতার উত্তর সীমারেখা, দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের দাইমাবাদ ছিল দক্ষিণতম সীমা, পশ্চিমে এর সীমা ছিল করাচি বন্দর বা গুজরাটের ধোলাবিরা পর্যন্ত এবং উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলার আলমগীরপুর এখন পর্যন্ত গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে হরপ্পার পূর্বতন সীমা।
শহর। প্রতিটি নগরকেই ঘিরে ছিল বিস্তীর্ণ চাষের জমি, নদী আর অরণ্য। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বাস করত পশুপালক কৃষক, শিকারি এবং খাদ্যসংগ্রাহক সম্প্রদায়। হরমীয় সভ্যতার অন্তর্গত ভৌগোলিক অঞ্চলে নগরের লোকসংখ্যা ছিল মুষ্টিমেয়। হুইলার-এর হরপ্পা ও মহেন-জো-দারো অঞ্চল দুটি তাদের অবস্থানগত গুরুত্বের জন্য রাজধানী শহর হিসেবে কাজ করত। এ ছাড়া চানহুদাড়ো, লোখাল, কালিবঙ্গ্যান, বানোয়ালী, সুতকাজেনদারো প্রভৃতি শহরে পরিণত ও উন্নত হরপ্পা সভ্যতার রূপ লক্ষ করা গেছে।