হিউয়েন সান্তের রচনা থেকে পুণ্ড্রবর্ধনের বর্ণনা :
পুণ্ড্রবর্ধন নগরে পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী ছিল। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, গৌতম বুদ্ধের খুল্লতাত পুত্র পাণ্ডুশাক্য কর্তৃক এই রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল। ঋগ্বেদের ঐতয়ের ব্রাহ্মণ পুণ্ড্রের কথা উল্লেখ আছে। এ ছাড়াও মহাভারতের বিভিন্ন পর্বে এই স্থানের কথা বর্ণিত হয়েছে। হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে আগত চিনা পর্যটক হিউয়েন সাং তাঁর রচিত ‘সি-ইউ-কি’ গ্রন্থে বাংলার এই জনপদ সম্পর্কে সুবিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের এই রাজ্যটি ছিল সুপরিকল্পিত ও ঘনবসতিসম্পন্ন। রাজধানীতে জলাশয়, রাজ-কার্যালয় ও পুষ্পদ্যান ছাড়াও 20টি বৌদ্ধ সংঘ ছিল। সেখানে প্রায় 3000 বৌদ্ধ ভ্রমণ বসবাস করত। এ ছাড়াও ছিল হিন্দু দেবালয়। হিন্দু মন্দিরে মধ্যে শৈব, বৈষুব ও কার্তিকের উপাসকের সংখ্যা ছিল অধিক।
মগধের সঙ্গে চিনের সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ গমনপথে পুণ্ড্রবর্ধনের অবস্থান। বৌদ্ধ ধর্মের আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, হিউয়েন সাঙের রচনায় তিনি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কা-চু-উ-খি-লো (রাজ মহলের কাছে কজঙ্গল) থেকে পূর্বে ভ্রমণ করেছিলেন এবং গঙ্গা পার হয়ে পুন-না-ফা-তান-না (পুণ্ড্রবর্ধন)-এ পৌঁছেছিলেন। তারপর তিনি আরও পূর্বে কিয়া-মো-লু-পো (কামরূপে) পৌঁছান। হিউয়েন সাঙের রচনায় কজঙ্গল থেকে পুণ্ড্রবর্ধন হয়ে কামরূপ যাত্রার মাধ্যমে মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকার সংস্কৃতির প্রসারের দিক নির্দেশ পাওয়া যায়।