১৯ শতকের বঙ্গীয় রেনেসাঁরসীমাবদ্ধতা একটি বিশ্লেষণ
১৯ শতকের বঙ্গীয় রেনেসাঁ ছিল এক যুগান্তকারী সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ও বৌদ্ধিক আন্দোলন, যা বাংলার সমাজকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে প্রভাবিত করেছিল।
বঙ্গীরেনেসাঁরসংক্ষিপ্তপ্ত পরিচিতি
বঙ্গীয় রেনেসাঁর সূচনা হয় মূলত ১৮১৭ সালে কলকাতা হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই রেনেসাঁর প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেরামধ প্রবর্তন।
বঙ্গীয় রেনেসাঁর সীমাবদ্ধতা
১. সামাজিক সীমাবদ্ধতা
**(ক) সমাজের নিম্নশ্রেণির বাইরে রেনেসাঁর প্রভাব:**
- রেনেসাঁর কেন্দ্রবিন্দু ছিল কলকাতা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে উচ্চবর্ণের শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়।
- সমাজের নিম্নসম্প্রদায়এবংসম্প্রদায় এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই আন্দোলনের খুব কম প্রভাব ছিল।
- ভূমিজ ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
(খ) গ্রামীণ সমাজে অপ্রবেশযোগ্যতা:
- রেনেসাঁর কর্মকাণ্ড মূলত শহর-কেন্দ্রিক ছিল। গ্রামীণ সমাজের বিশাল অংশ এই আন্দোলনের বাইরে থেকে যায়।
- ফলে, গ্রামীণ সমাজে কুসংস্কার এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি দূরীকরণের প্রয়াস তেমন কার্যকর হয়নি।
২. নারীর অবস্থার উন্নয়ন সীমিত ছিল
**(ক) নারী শিক্ষা ও অধিকার প্রসার:**
- বিদ্যাসাগর এবং রামমোহন রায়ের মতো ব্যক্তিত্বদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নারীর অবস্থান বি•নারী উন্নত হয়নি।
- নারী শিক্ষার আন্দোলন প্রধানত উচ্চবর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। নিম্নবর্ণের এবং মুসলিম নারীরা এই আন্দোলনের থেকে বঞ্চিত হন।
**(খ) বিধবা পুনর্বিবাহের সীমানা:**
- ১৮৫৬ সালের বিধবা পুনর্বিবাহ আইন সত্ত্বেও বাস্তবে এর •অধিকাংশব সীমিত ছিল।
- অধিকাংশ পরিবার বিধবা নারীদের পুনর্বিবাহকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।
৩. ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও সংস্কার আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা
(ক) ধর্মের সংস্কার আংশিক ছিল:
- রামমোহন রায় এবং ব্রাহ্ম সমাজের মতো আন্দোলনগুলি হিন্দু ধর্মের নির্দিষ্ট কিছু প্রথা সংস্কারে মনোনিবেশ করেছিল।
- তবে তারা ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে সমান গুরুত্ব দেয়নি। যেমন, ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি নিয়ে কম কাজ করা হয়।
(খ) সাম্প্রদায়িক বিভাজন:
- রেনেসাঁ হিন্দু সমাজের উপর কেন্দ্রীভূত থাকায় মুসলিম সমাজ এতে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
- এটি পরবর্তী সময়ে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যায়।
৪. অর্থনৈতিক সংস্কারের অভাব
(ক) ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার:
- রেনেসাঁর চিন্তাবিদরা জমিদারি ব্যবস্থার সমস্যাগুলি নিয়ে তেমন কোনো কর্মসূচি নেননি।
- কৃষকদের উপর জমিদারদের অত্যাচার এবং ঋণগ্রস্ততার সমস্যাগুলি সমাধানের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
(খ) শ্রমজীবী শ্রেণির প্রতি উদাসীনতা:
- শিল্প বিপ্লবের সময়ে বাংলায় শ্রমজীবী মানুষের সমস্যা এবং তাদের অধিকার নিয়ে তেমন কোনো সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি।
- শ্রমিকদের কল্যাণ এবং শিল্পায়নের ন্যায্যতার দিকে কোনো মনোযোগ ছিল না।
৫. রাজনৈতিক চেতনার অভাব
(ক) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতি নরম মনোভাব:
- রেনেসাঁর অনেক নেতাই ব্রিটিশ শাসনকে ভারতীয় সমাজের উন্নতির জন্য একটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসেবে দেখেছিলেন।
- জাতীয়তাবাদী চেতনার অভাব এবং ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হওয়া একটি বড় সীমাবদ্ধতা ছিল।
(খ) গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অভাব:
- সমাজের সকল শ্রেণি এবং সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার পরিবর্তে রেনেসাঁ একটি৬.পশ্চিমাণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
৬. পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা
(ক) ভারতীয় ঐতিহ্যের অবমূল্যায়ন:
- অনেক রেনেসাঁর নেতাই পশ্চিমা শিক্ষা এবং সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দেন। এতে ভারতীয় ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
- ফলে, ভারতীয় ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ এই রেনেসাঁর বাইরে রয়ে যায়।
(খ) পাশ্চাত্য অনুসরণের অতিরিক্ত ঝোঁক:
- নিজস্ব সামাজিক সমস্যাগুলি বোঝার এবং তাদের সমাধানের ক্ষেত্রে স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গির অভাব দেখা যায়।
বঙ্গীয় রেনেসাঁর সীমাবদ্ধতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
১. সাম্প্রদায়িক বিভাজন
- হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব আরও গভীর হয়, যা পরে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাধা সৃষ্টি করে।
২. সমাজের নিম্নশ্রেণির প্রতি অবহেলা
- নিম্নবর্ণ ও শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়ন সীমিত থাকার কারণে তাদের সমস্যাগুলি সমাধান করা যায়নি।
৩. জাতীয়তাবাদের দেরি
- রেনেসাঁ ব্রিটিশ শাসনের একটি বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বোঝার ক্ষেত্রে দেঘটায়�, যা ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রামে বিলম্ব ঘটায়।
উপসংহার
১৯ শতকের বঙ্গীয় রেনেসাঁ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক পুনর্জাগরণসীমাবদমূলক সামাজিক পুনর্জাগরণের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।