জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণা অথবাজাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা।এই ঘোষণা প্রণয়নকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই ঘোষনা একটি মুখবন্ধ ও ত্রিশটি অনুচ্ছেদ রয়েছে।
অনুচ্ছেদ-২১ : (ক) প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারের অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
(খ) প্রত্যেকেরই নিজ দেশের সরকারি চাকুরিতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে।
(গ) জনগনের ইচ্ছাই সরকারের ক্ষমতা ভিত্তি হবে ; এ ইচ্ছা সার্বজনীন ও সমান ভোটধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে এবং প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে; গোপন ব্যলটে অথবা অনুরূপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অনুচ্ছেদ-২২ : সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে, প্রত্যেকরই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশে অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সমূহ আদায় করার জন্য স্বত্ববান।
অনুচ্ছেদ-২৩ : (ক) প্রত্যেকেরই কাজ করা, অবাধে চাকরি নির্বাচনের, কাজের জন্য ন্যায্য ও অনুকূল অবস্থা লাভের এবং বেকারত্ব থেকে রক্ষিত হবার অধিকার রয়েছে।
(খ) প্রত্যেকেরই কোন বৈষম্য ব্যতিরেকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
(গ) প্রত্যেক কর্মীর তার নিজের ও পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এমন ন্যায্য ও অনুকুল পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনবোধে সেই সঙ্গে সামাজিক সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থাদি সংযোজিত লাভের অধিকার রয়েছে।
(ঘ) প্রত্যেকেরই নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকার রয়েছে।
অনুচ্ছেদ-২৪ : প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে। কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
অনুচ্ছেদ-২৫ : (ক) নিজের ও নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য, ও কল্যাণের নিমিত্তে পর্যাপ্ত জীবন মানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবামূলক কার্যাদির সুযোগ এবং বেকারত্ব, পীড়া, অক্ষমতা, বৈধম্য, বার্ধক্য অথবা অনিবার্য কারণে জীবন যাপনে অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এ অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
(খ) মাতৃত্ব ও শৈশব অবস্থায় প্রত্যেকে বিশেষ-যত্ন ও সহায়তা লাভের অধিকারী। বৈবাহিক বন্ধনের ফলে বা বৈবাহিক বন্ধনের বাহিরে জন্ম হোক না কেন, সকল শিশুই অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে।
অনুচ্ছেদ-২৬ : (ক) প্রত্যেকেরই শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। অন্ততঃপক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ে শিক্ষা অবৈতনিক হবে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সকলের সমভাবে উন্মুক্ত থাকবে।
(খ) ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ও মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরিচালিত হবে। সমঝোতা, সহিষ্ণুতা ও সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধুত্ব উন্নয়ন এবং শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘের কর্মতৎপরতার বৃদ্ধি করবে।
(গ) যে প্রকার শিক্ষা তাদের সন্তানদের দেওয়া হবে তা পূর্ণ থেকে বেছে নেওয়ার অধিকার পিতা-মাতার রয়েছে।
অনুচ্ছেদ-২৭ : (ক) প্রত্যেকেরই গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক জীবনে অবাদে অংশগ্রহণ, শিল্পকলা চর্চা করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও তার সুফলসমূহের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে।
(খ) প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান, সাহিত্য অথবা শিল্পভিত্তিক সৃজনশীল কাজ থেকে উদ্ভূত নৈতিক ও বৈষায়িক স্বার্থসমূহ রক্ষণের অধিকার রয়েছে।
অনুচ্ছেদ-২৮ :- প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আর্ন্তজাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এ ঘোষণা পত্রে উল্লেখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে।
অনুচ্ছেদ-২৯ : (ক) প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি কর্তব্য রয়েছে কেবল যার অন্তর্গত হয়েই তার ব্যক্তিত্বের অবাধ ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব।
(খ) স্বীয় অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ প্রয়োগকালে প্রত্যেকেরই শুধু ঐ ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকবে বা কেবল অপরের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহের যথার্থ স্বীকৃত ও শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নৈতিকতা, গণশৃঙ্খলা ও সাধারণ কল্যাণের ন্যায্য প্রয়োজন সমূহ মিটানোর উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা নিরুপিত হয়।
(গ) এ সকল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগকালে কোন ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে ও মূলনীতি লঙ্ঘন করা চলবে না।
অনুচ্ছেদ-৩০ এ ঘোষণায় উল্লেখিত কোন বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবেনা যাতে মনে হয় যে এ ঘোষণার অন্তর্ভূক্ত কোন অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তি বিশেষের আত্মনিয়োগের অধিকার রয়েছে।