প্রবাদ কাকে বলে?
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে প্রকাশ করা হলে তাকে প্রবাদ বলে।
প্রবাদের বৈশিষ্ট্য:
1। প্রবাদ সংক্ষিপ্ত ও সংহত উচ্চারণ।
2। প্রবাদ প্রখর সমাজ দৃষ্টি ও সামাজিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়।
3। প্রবাদ যেহেতু সমাজ-সংসারের অতিপরিচিত অসাধারণ অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করে তাই প্রবাদের আবেদন সর্বজন গ্রাহ্য।
4। বাচ্যার্থ সামনে এলেও ব্যঞ্জনার্থই প্রকৃত অর্থ।
5। প্রবাদের রচয়িতার নাম জানা অসম্ভব, স্রষ্টার এই নাম হীনতাই প্রবাদ কে নিরপেক্ষ উক্তি দেয়।
প্রবাদের মধ্য দিয়ে কিভাবে সমাজচিত্র ফুটে উঠেছে তা উদাহরণসহ উল্লেখ করো।
অথবা,বাংলা প্রবাদে সমাজ বাস্তবতার যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
লােকসমাজের সঙ্গে নিবিড় সংযােগই প্রবাদের প্রাণ। তাই একদিকে দেশের ভূপ্রকৃতি, অন্যদিকে সমাজের নানাস্তরের মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের সংস্কার, বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির কাহিনি বাংলা প্রবাদে প্রকাশিত হয়েছে।
পশুপাখি ও ভূপ্রকৃতি: কুমির, বাঘ, শকুন, বিড়াল, কাক ইত্যাদি পশুপাখির কথা যেমন বাংলা প্রবাদে আছে তেমনই নদী, খাল, বিল নিয়ে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতির একটি ছবিও বাংলা প্রবাদগুলিতে পাওয়া যায়। যেমন- ‘জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ’।
পেশা-পরিচয়: তাঁতি, বােষ্টম, বামুন, কৃষক, ফকির ইত্যাদি নানা পেশার মানুষের কথা প্রবাদে পাওয়া যায়। যেমন- ‘খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে/কাল হল এঁড়ে গােরু কিনে’।
স্বাস্থ্যবিধি: স্বাস্থ্যবিধির প্রকাশও ঘটেছে বাংলা প্রবাদগুলিতে। যেমন—’সকালে শুয়ে সকালে উঠে, তার কড়ি না বৈদ্যে লুটে’।
আবহাওয়া: আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণাও প্রবাদে পাওয়া যায়। যেমন -‘পূর্ব আষাঢ় দখিনা বায়, সেই বৎসর বন্যা হয়’।
সমাজ-মনস্তত্ব: সামাজিক স্বার্থপরতার ছবি বাংলা প্রবাদে রয়েছে- ‘কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরােলে পাজি’।
আচরণবিধি: ব্যক্তিগত এবং সামাজিক আচরণবিধির ইঙ্গিতও প্রবাদে দেওয়া হয়েছে। যেমন—‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’ কিংবা ‘অতি দর্পে হত লঙ্কা’ ইত্যাদি।