বাংলার রাজা গণেশের ওপর একটি নিবন্ধ লেখো। Write an article on king Ganesha of Bengal.

বাংলাদেশে দীর্ঘ সুলতানি শাসনের মাঝে একজন মাত্র হিন্দু রাজার আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি হলেন রাজা গণেশ। ঐতিহাসিকেরা গণেশের একাধিক নাম উল্লেখ করেছেন-কানস, কংস, কাশী প্রভৃতি।

‘বিয়াজ-উস-সালাতিন’ প্রশ্নে বলা হয়েছে, গণেশ ভাদুরিয়ার জমিদার ছিলেন। এটি ছিল উত্তরবঙ্গোর একটি অঞ্চল। অন্যান্য জমিদারের ওপর গণেশের বেশ প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল। তিনি ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাই বাংলার ইলিয়াস শাহী সুলতানদের দুর্বলতার সুযোগে গণেশ বাংলার সিংহাসন দখলে উদ্যোগী হন। বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সময় থেকেই বাংলার দরবারে গণেশ প্রচুর ক্ষমতা ভোগ করতেন। আজম শাহের পরবর্তী সুলতানগণও ছিলেন অযোগ্য ও দুর্বল। স্বাভাবিকভাবেই বাংলার প্রশাসনে গণেশের প্রভাব বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত সুলতান আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহকে হত্যা করে গণেশ স্বয়ং বাংলার সিংহাসনে বসেন (1415 খ্রিস্টাব্দ)।

একজন হিন্দু কর্তৃক বাংলার সিংহাসন অধিকৃত হলে মুসলিম অভিজাতরা বিক্ষুব্ধ ও ‘বিচলিত হয়ে ওঠেন। এইসব বিক্ষুদ্ধদের নেতৃত্ব দেন দরবেশগণ। এই কারণে গণেশ কয়েকজন দরবেশকে শাস্তি দেন এবং দরবারে বহু ইসলামি প্রথা বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় গণেশকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য দরবেশদের নেতা নূরকুৎ আলম জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শার্কিকে বাংলাদেশ আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

শার্কি বাংলায় আক্রমণ করলে গণেশ সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ইতিমধ্যে গণেশের পুত্র শার্কির সঙ্গে যোগদান করে নিজেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। তাঁর নতুন নামকরণ হয় জালালউদ্দিন। শার্কি জালালউদ্দিনকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়ে জৌনপুরে ফিরে যান।

রাজপদ ত্যাগ করতে হলেও গণেশের প্রতিপত্তি অব্যাহত থাকে। পুত্র জালালউদ্দিনকে সামনে রেখে গণেশ বিরোধী দরবেশদের কড়া হাতে দমন করেন। নিজেকে নিরাপদ করার পর গণেশ জালালউদ্দিনকে সরিয়ে নিজেই আবার সিংহাসন দখল করেন। যদুনাথ সরকার-এর মতে, গণেশ নিজপুত্রকে হিন্দুধর্মে পুনরায় দীক্ষা দেন। এই সময় গণেশ ‘দনুজমর্দ্দনদেব’ উপাধি ধারণ করেন। শেষ পর্যন্ত পুত্র যদু বা জালালউদ্দিনের ষড়যন্ত্রেই গণেশ নিহত হন (1418 খ্রিস্টাব্দ)।

ঐতিহাসিক বেভারিজ, রাজা গণেশকে ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতার অধিকারী ছিলেন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। সুদৃঢ় মুসলিম আধিপত্যের যুগে হিন্দু শাসন প্রবর্তন, অল্পকালের জন্য হলেও রাজা গণেশের কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে। আসলে মুসলিম কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে তিনি ক্ষমতাশালী মৌলানা, উলেমা, দরবেশদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তাই তিনি নিজ শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারেননি। তবে তিনি সব শ্রেণির মুসলমানদের প্রতি অনুদার ছিলেন, এ কথা ঠিক নয়। ফিরিস্তা-র ভাষায়- “রাজা গণেশ মুসলমান না হলেও মুসলমানদের সঙ্গ্যে এত বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতার সম্পর্ক রেখেছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর বহু মুসলমান তাঁকে মুসলিম প্রথায় কবরস্থ করার দাবি জানান।” ফিরিস্তা গণেশের শাসন দক্ষতারও প্রশংসা করেছেন।

রাজা গণেশ শিল্প সাহিত্যেও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। অনেকের অনুমান বাংলা রামায়ণ রচয়িতা কৃত্তিবাস গণেশের রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন। মিথিলার কবি বিদ্যাপতি তাঁর সমসাময়িক ছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading