মগধের উত্থানের কারণগুলি আলোচনা করা

মগধের উত্থানের কারণ-

বিম্বিসারের রাজত্বকালে মগধের অগ্রগতির ইতিহাসের সূচনা হয়। কলিঙ্গ জয়ের দ্বারা সেই অগ্রগতির সমাপ্তি ঘটে। কয়েক শতাব্দী ধরে মগধ রাজ্যটি ছিল উত্তর ভারতের কেন্দ্রস্থল। তবে মগধের উত্থান কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। এর মূলে ছিল বিভিন্ন কারণ। যেমন –

ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ঃ 

ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মগধের অনুকূলে ছিল। পর্বত, নদী ও খাল পরিবেষ্টিত থাকায় মগধের নিরাপত্তার কোন অভাব ছিল না। মগধের প্রাচীন রাজধানী ছিল সাতটি পর্বতমালা দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং পরবর্তী রাজধানী পাটলিপুত্র ছিল গঙ্গা ও শোন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। সুতরাং মগধের রাজধানী ছিল সুরক্ষিত। 

রাজবংশের ভূমিকা ঃ

 মগধে একাধিক রাজবংশ রাজত্ব করেছিল। প্রতিটি রাজবংশেরই নীতি ছিল মগধের বিস্তার। হর্যঙ্ক বংশের বিম্বিসার ও অজাতশত্রু, শৈশুনাগ বংশের শিশুনাগ ও কালাশোক, নন্দবংশের মহাপদ্মনন্দ প্রমুখ সকল রাজাই মগধের বিস্তার নীতিকে অব্যাহত রাখেন।

যোগ্যতাসম্পন্ন নৃপতি ঃ 

মগধে পর পর অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন নৃপতি সিংহাসনে বসার দরুন উন্নতি অব্যাহত থাকে। যখনই কোন রাজবংশের শাসন দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখন তাকে উচ্ছেদ করে নতুন রাজবংশ যোগ্যতার সঙ্গে শাসন চালাতে পেরেছিল।

কৃষির প্রসার ঃ

নদীমাতৃক অঞ্চলে মগধ অবস্থিত হওয়ায় কৃষির যথেষ্ট প্রসার ঘটেছিল। উর্বর জমি হওয়ায় ফসলের উৎপাদন ছিল ব্যাপক। প্রকৃতপক্ষে সেযুগে গাঙ্গেয় উপত্যকা ছিল উত্তরভারতের শস্যভান্ডার।

গঙ্গা নদীর ভূমিকা ঃ 

গঙ্গা বিধৌত অঞ্চলে নদীভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য মগধের সমৃদ্ধির সহায়ক হয়। গঙ্গা নদী ও তার শাখা নদীগুলি যথা দক্ষিণে শোন এবং উত্তরে ঘর্ঘরা ও গণ্ডক মগধের প্রতিরক্ষা সহায়ক হয়েছিল।

খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ঃ

 মগধের সমৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল মগধের খনিজ সম্পদ। মগধের লোহার খনিগুলি ছিল তার সামরিক শক্তির গর্ভগৃহ। মগধ এই লোহার খনিগুলির ওপর একচেটিয়া অধিকার স্থাপন করে। মগধের উন্নত কৃষি, লোকবল, তার অরণ্য সম্পদ এবং খনিজ সম্পদ মগধকে অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় অসাধারণ শক্তিশালী করে তুলেছিল। শক্তিশালী হওয়ার ফলে মগধ ক্রমে আগ্রাসী হয়ে ওঠে।

গোঁড়াপন্থী ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাব মুক্ত ঃ 

দীর্ঘকাল যাবৎ মগধ আর্য আক্রমণের গণ্ডি থেকে দূরে থাকায় গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিধিনিষেধ এই অঞ্চলে বিশেষ ছিল না। এই অবস্থায় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সার্বজনীন আবেদন এই অঞ্চলের মানুষের মনে রাজনৈতিক ভাবধারার সম্প্রসারণ ঘটায়। মগধ এই রাজনৈতিক ভাবধারার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। মগধের জনগণ এই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের অভ্যুত্থান মগধে এক শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী সাম্রাজ্য গঠনের সহায়ক হয়।

মূল্যায়ন ঃ উত্তর ভারতের রাজনৈতিক অনৈক্য মগধের উত্থানের সহায়ক। অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে মগধের রাজবংশগুলি ক্ষুদ্র মগধ রাজ্যকে সাম্রাজ্যের মর্যাদায় উন্নীত করতে সমর্থ হয়। 

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading