সামাজিক সংস্থা হিসাবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা কি

সামাজিক সংস্থা হিসাবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা:

সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিশুকে বিশেষভাবে সাহায্য করে পরিবার (Family), বিদ্যালয় (School) বন্ধু দল, প্রতিবেশী প্রভৃতি। শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা (Role of School in Socialization Process) যে সমস্ত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি আলোচনা করা হল –

  1. বিদ্যালয় পরিবেশে অভিযোজন
  2. ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশসাধন
  3. সামাজিক ঐতিহ্যের সংরক্ষন ও সঞ্চালন
  4. বৃত্তিমুখী নির্দেশনাদান
  5. অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন
  6. গণতান্ত্রিক চেতনার সঞ্চার
  7. আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন

 বিদ্যালয় পরিবেশে অভিযোজন:

শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের অন্যতম ভূমিকা (Role of School in Socialization Process) পালন করে থাকে। শিশুরা যখন বাড়ির পরিবেশ থেকে বিদ্যালয়ের পরিবেশে পদার্পন করেন তখন এক নতুন পরিবেশ শিশুরা উপলব্ধি করতে থাকে।

আর বিদ্যালয় শিশুকে এই নতুন পরিবেশে সহজে শিশুকে মানিয়ে নিতে বা সামাজিকীকরণে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। বিদ্যালয়ের পরিবেশে অভিযোজন এর মাধ্যমে শিশুর মধ্যে মানিয়ে নেয়ার প্রবণতা গঠন হয়ে থাকে।

ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশসাধন:

বিদ্যালয় শিশুকে সার্থক সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। শিক্ষার্থীর চারিত্রিক, নৈতিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক প্রভৃতির বিকাশ সাধন করে থাকে।

অর্থাৎ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। ফলে শিশুরা সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে সহজে মিলেমিশে থাকতে পারে বা সামাজিকীকরণ করতে পারে।

সামাজিক ঐতিহ্যের সংরক্ষন ও সঞ্চালন:

শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের অন্যতম ভূমিকা (Role of School in Socialization Process) হল সামাজিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও সঞ্চালন করা। এর ফলে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলি সহজে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চালিত হয়।

বৃত্তিমুখী নির্দেশনাদান:

শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের অন্যতম ভূমিকা (Role of School in Socialization Process) হল বৃত্তিমুখী নির্দেশনা দান করা। এর ফলে শিশুরা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে পারে।

অর্থাৎ ভবিষ্যৎ জীবনের কোন বৃত্তি বা পেশা গ্রহণের মধ্য দিয়ে জীবিকা অর্জন করবে তা সহজে বিদ্যালয় শিশুকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তাই শিশুরা ভবিষ্যতে কি ধরনের বৃত্তি বা পেশা গ্রহণ করবে সে বিষয়ে বিদ্যালয় বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন:

শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানের আলো জ্বালানোর মধ্য দিয়ে সমাজের কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস দূরীকরণ করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে বিদ্যালয় শিশুকে সমাজের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন করতে সহায়তা করে। ফলে শিশু আধুনিক যুক্তি নির্ভর, বিজ্ঞান চেতনাসম্পন্ন সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

তাই বিদ্যালয় শিশুকে যাবতীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জনের মধ্য দিয়ে সামাজিকীকরণে (Role of School in Socialization Process) বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

গণতান্ত্রিক চেতনার সঞ্চার:

বিদ্যালয় শিশুকে গণতান্ত্রিক চেতনার সঞ্চার ঘটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। গণতন্ত্র হল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। তাই বিদ্যালয় গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক। গণতান্ত্রিক চেতনা সঞ্চারের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় শিশুকে সামাজিকীকরণে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন:

সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে বিদ্যালয় শিশুকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে সহায়তা করে। অর্থাৎ বিদ্যালয় পরিবারের গণ্ডি থেকে বের করে নিয়ে এসে শিশুকে মুক্ত সমাজের মধ্যে বিশেষ করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সেতু হিসাবে কাজ করে।

তাই দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে বা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে শিশুকে পরিচিতিকরণের মাধ্যমে বিদ্যালয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে শিশু সামাজিকীকরণের উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠে।

উপসংহার:

পরিশেষে কথা বলা যায়, শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অনবদ্য। তাই বিদ্যালয়কে শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল – সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ (School is a miniature society) হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তাই বিদ্যালয় হল এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সাথে সাথে সামাজিকীকরণ সহজে সম্ভবপর হয়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading