অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কাকে বলে? এর উদ্দেশ্য ও নীতিগুলি লিখুন। শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বাস্তবায়ন কিভাবে করবেন উদাহরণসহ লিখুন।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কাকে বলে?

অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষ বলতে বোঝায় শ্রেণিকক্ষে সমস্ত ধরনের শিক্ষার্থীর সংযুক্তিকরণ এবং সাধারণ শিক্ষা ও বিশেষ শিক্ষার মধ্যে সমস্ত ধরনের ব্যবধান ঘোচানোর চেষ্টা করা।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষের উদ্দেশ্য:

শ্রেণিকক্ষে শিশুদের চাহিদা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। তাই শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার কতকগুলি উদ্দেশ্য আছে। এগুলি হল-

• ন্যূনতম নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে রেখে মৃদু মাত্রার প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিক যত্নযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

• শ্রেণিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সুনির্দিষ্ট শিক্ষাগত চাহিদা পূরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া।

• বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সহপাঠীদের প্রতি সাধারণ ক্লাসের স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মানসিকতা উন্নত করার এবং সহযোগী মনোভাব গঠনের উপায় নির্ধারণ করা।

• শ্রেণিতে বিভিন্ন সুযোগসুবিধা সমবন্টনের মাধ্যমে ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ক্রমে সামাজিক দূরত্ব কমিয়ে আনা।

• বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোমতেই হতাশায়, হীনম্মন্যতায় না ভেগে সে দিকে শিক্ষকের সর্বদা সচেষ্ট হতে হবে।

ZAHIR • শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো।

শিক্ষার্থীদের প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। •

• শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত কোনো শিক্ষার্থীই যাতে শ্রেণিচ্যুত না হয় সে দিকে লক্ষ রেখে পাঠদান করা।

শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতি:

শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার তিনটি নীতি রয়েছে। এগুলি হল-

(a) ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা:

শ্রেণির প্রতিটি শিশুই কোনো না কোনো ভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। কারণ জ্ঞানমূলক দক্ষতা বা পারদর্শিতার দিক থেকে

কখনোই শ্রেণিকক্ষের সমস্ত শিশুকে একটি বা কয়েকটি দলে ভাগ করা যায় না। মনে রাখতে হবে প্রতিটি শিশুই যেহেতু একেকটি পৃথক সত্তা তাই প্রত্যেকেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং প্রত্যেকের জন্যই পৃথক পৃথক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(b) শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ:

শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য যে-কোনো রকম উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। কোনো রকম শাস্তির ভয় না দেখিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে তাদের যেমন শিক্ষা দিতে হবে তেমনি তাদের ক্ষমতা বিবেচনা করে পাঠদানের কৌশল ঠিক করতে হবে।

(c) উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ:

শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামনে শুধুমাত্র জ্ঞানমূলক শিক্ষা না দিয়ে সব সময় উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে জীবনে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করবেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করে অনেক শিক্ষার্থীই যা সফলতার ভিডিয়ো, পোস্টার দেখানো, সম্ভব হলে এমন মানুষকে শ্রেণিতে উপস্থিত করে শিক্ষার্থীদের সামনে তার বক্তব্য অভিজ্ঞতা অর্থাৎ জীবনে সফলতার পদক্ষেপগুলি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করানো যেতে পারে।

শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বাস্তবায়ন

শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার উপায়- শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বাস্তবায়নে তিনটি উপায় গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলি হল-

(a) অনুবন্ধ প্রণালী:

জ্ঞান অখণ্ড ও অবিভাজ্য। মানবমন এই অখণ্ড ও অবিভাজ্য জ্ঞান আহরণে সক্ষম। শিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হল-শিক্ষার্থীর মন ও উপস্থাপিত জ্ঞানের মধ্যে অনুবন্ধ রচনা করা। শ্রেণিকক্ষে সমজাতীয় বিষয়সমূহের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন দ্বারা শিক্ষণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করাকেই বলা হয় অনুবন্ধ প্রণালী। এই প্রণালী দ্বারা শিক্ষণ শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে পরিপূর্ণ অখণ্ড জ্ঞান অর্জন করে।
শ্রেণিকক্ষে মূল বিষয়ের সঙ্গে সমজাতীয় বিষয়সমূহের যোগসূত্র স্থাপন করে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার উপায়ের উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হল:

Screenshot 2024 08 08 084829

(b) কেন্দ্রায়ণ প্রণালী:

বিভিন্ন বিষয়কে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করতে গেলে ওই বিষয়গুলির মধ্যে যে-কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্রবিন্দু ধরে সকল বিষয়কে ওই কেন্দ্রবিন্দুর অভিমুখী করার কৌশলকে বলা হয় কেন্দ্রায়ণ বা Concentration, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর অন্তর্ভুক্তিকরণে এই প্রমাণ খুবই কার্যকরী।

বিষয়-আমাদের পরিবেশ
একক-প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের অভিজ্ঞতা।
আজকের পাঠ-পাথরের ব্যবহার
মূল বিষয়: ‘পাথরের ব্যবহার


পাথরের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে গিয়ে মানুষ প্রথমে কীভাবে পাথর ব্যবহার শিখল, পাথরের হাতিয়ার কীভাবে তৈরি করল, এর সুবিধা কী হল, পাথরের হাতকুঠার তৈরি সম্পর্কে জানবে। পাথর দিয়ে অলংকার বানানো হয়, পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালানো হয়। মধ্যযুগে পাথর দিয়ে বড়ো বড়ো স্থাপত্য, স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়েছে। যেমন- লালকেল্লা, তাজমহল, হুমায়ুন স্তম্ভ। আধুনিক যুগে-রাস্তা, বাড়ি-ঘর প্রভৃতি তৈরি হচ্ছে।


শ্রেণির সকল ধরনের শিক্ষার্থী পাথরের ব্যবহার সম্পর্কে জানবে এবং তা বলতে পারবে। শিক্ষার্থীদের হাতে পাথরের টুকরো দিলে তা দেখে বলতে

Screenshot 2024 08 08 085135

মূল বিষয়: পাথরের ব্যবহার
উপরের আলোচনায় দেখা যায়-আমরা যাই আলোচনা করি না কেন এর কেন্দ্রে আছে পাথরের ব্যবহার, এর সাহায্যে শ্রেণিতে সহজেই শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তিকরণ বা শ্রেণির পাঠে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা যায়।

(c) সমন্বয়ন প্রণালী:

কোনো একটি নির্দিষ্ট জীবনকেন্দ্রিক ও শিক্ষাকেন্দ্রিক বিষয়কে মূল কেন্দ্রে স্থাপন করে যে প্রণালী দ্বারা পাঠ্যবিষয়গুলিকে পারস্পরিক ক্রিয়াশীল সম্পর্কে আবদ্ধ রাখা হয়, তাকে বলা হয় সমন্বয়ন প্রণালী।


অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখনে সমন্বয়ন প্রণালী খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এখানে মূল বিষয় অন্য বিষয়ের সঙ্গে সংযোগসাধন দ্বারা সেগুলি শিক্ষণে সহায়তা করে। এই প্রণালীর প্রবক্তা হলেন জন ডিউই। শ্রেণিকক্ষে সমন্বয়িত শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের মূল উদ্দেশ্য সুসংবদ্ধ অভিজ্ঞতার উপস্থাপন। সকল ধরনের শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে পদ্ধতি দ্বারা পাঠদান করানো সম্ভব।

Screenshot 2024 08 08 085340
en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading