আদি বৌদ্ধ এবং জৈন গ্রন্থে পুণ্ড্রদের উল্লেখের ওপর একটি টীকা লেখো।

আদি বৌদ্ধ এবং জৈন গ্রন্থে পুণ্ড্রদের অবস্থান :

প্রাচীন বঙ্গদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হল পুণ্ড্রবর্ধন। মহাকাব্য, পুরাণ এবং বিভিন্ন বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থে পুণ্ড্রদের উল্লেখ পাওয়া যায়। হরিসেন রচিত ‘বৃহৎ কথাকোষ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে জানা যায় পুণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্গত কোটিবর্ষের ভদ্রবাহু ছিলেন মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গুরু। জৈন আগম গ্রন্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল ‘কল্পসূত্র’। এটির রচনাকার ছিলেন ভদ্রবাহু। তবে কল্পসূত্রের রচয়িতা ভদ্রবাহু এবং পূর্বোক্ত ভদ্রবাহু সম্ভবত একই ব্যক্তি নন। কল্পসূত্র থেকে জানা যায়, ভদ্রবাহুর চারজন থের শিষ্য ছিলেন-গোদাস, অগ্নিদত্ত, জনদত্ত ও সোমদত্ত। শিষ্য গোদাসকে কেন্দ্র গোদাসগণ নামে জৈন সম্প্রদায়ের একটি স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠেছিল এবং কালক্রমে চারটি স্থানকে কেন্দ্র করে গোদাসগণীয় শিষ্যমণ্ডলী পুনরায় চারটি উপশাখায় বিভক্ত হয়-তাম্রলিপ্তিকা, কোটিবর্ষীয়া, পৌণ্ড্রবর্ধনীয়া ও দাসীখর্বটিকা। এই গোদাসগণীয় শাখার প্রতিষ্ঠাকাল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতাব্দী। অর্থাৎ, এই সময়ে পুণ্ড্রবর্ধন অঞ্চলে জৈনধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। বৌদ্ধগ্রন্থ দিব্যবদানে প্রথম নগর অর্থে ‘পুণ্ড্র’ (পুণ্ড্রনগর) শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। অশোকাবদান এবং দিব্যবদান শীর্ষক গ্রন্থে পুণ্ড্র অঞ্চলে বৌদ্ধদের নিপীড়নের বর্ণনা আছে। তবে বোধিসত্ত্বাবদান কল্পলতায় বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারের জন্য গৌতম বুদ্ধ যে পুণ্ড্রবর্ধনে এসেছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ‘আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ গ্রন্থে ‘পৌন্ডুদ্রহ’ শব্দের উল্লেখ আছে। এর দ্বারা পুণ্ড্র এবং ওড্র-কে বোঝানো হয়েছে। তিব্বতীয় মতবাদ অনুসারে, পণ্ডিত নাগার্জুন পুণ্ড্রবর্ধনে বিহার নির্মাণ করেছিলেন। তবে তার কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীকালে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং পুণ্ড্র অঞ্চলে অশোক নির্মিত স্তূপ এবং পো-শি-পো নামে বৌদ্ধ মঠের উল্লেখ করেছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading