ঔপনিবেশিক আমলে উত্তরবঙ্গে চা বাগানের অভিবাসন এবং শ্রমিক নিয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করো। Discuss the immigration and recruitment of labourers in tea gardens in the colonial North Bengal.

দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি উভয় চা উৎপাদনকারী অঞ্চলই, চায়ের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হওয়া থেকে ভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চল থেকে শ্রমিকদের অভিবাসনের সাক্ষী হয়েছে। তাদের বেশিরভাগটাই এসেছিল ছোটোনাগপুরের এবং অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে। যেমন- বিহারের ভাগলপুর, বাংলার চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে 1850-1900 সালের মধ্যবর্তী সময়ে। চা উৎপাদন ক্ষেত্রে বহিরাগত শ্রমিকদের আগমনের পিছনে দুটি কারণ ছিল-① তৎকালীন উত্তরবঙ্গের আদিবাসী জনজাতিরা, যেমন-রাজবংশী, মেচ, গারো, ধীমাল, রাভারা এই কাজ করতে অনিচ্ছুক ছিল চা-বাগানগুলিতে, কারণ তারা কৃষিকাজেই শ্রেয় বলে মানত এবং 2 ওই বহিরাগত শ্রমিকরা শারীরিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী ও কর্মদক্ষ ছিল যেমন, তেমনি অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত হওয়ার দরুন তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট উদাসীন ছিল। ফলে তাদেরকে দিয়ে যতটা সম্ভব কাজ করিয়ে নেওয়া যেত।

ডুয়ার্সের চা বাগানে প্রাথমিকভাবে নেপালি মানুষজনদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হলেও পরবর্তীকালে চা উৎপাদনে ফলন বাড়ানোর জন্য ছোটোনাগপুর ও সাঁওতাল পরগণা থেকে ওরাও, মুন্ডা, সাঁওতাল প্রভৃতি জনগোষ্ঠীদের তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে নিয়োগ করা হতে থাকে। DPA report অনুযায়ী 1918-19 থেকে 1930-31 বর্ষে প্রতিবছর 2-2.5 লক্ষ করে বহিরাগত শ্রমিকদের চা চাষে নিয়োগ করা হতে থাকে।

ঔপনিবেশিক ভারতের ব্রিটিশ সরকার 1863 সালের Act III পাশ করে চা বাগানে শ্রমিকদের নিয়োগের লাইসেন্স ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে। শ্রমিকদের অভিবাসন বাংলার অন্যান্য জেলা ও নেপাল থেকে জলপাইগুড়িতে আগমন 1879-80 সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অভিবাসীরা মূলত দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি অঞ্চলের চা বাগানে কর্মরত ছিলেন। 1910 সালে উত্তরবঙ্গে আগত অভিবাসীদের সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে তারা এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার প্রায় 40-55%-এ পৌঁছে গিয়েছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করে চা-রোপণ থেকে শুরু করে পরিচর্যা এমনকি পাতা তোলা পর্যন্ত তাদের ছাড়া চলা যেত না। এই কারণেই চা বাগানের মালিকরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকদের নিয়ে এসেছিলেন যারা ভিন্ন ভাষা, কৃষ্টি, রুচির মানুষ ছিলেন, এ ছাড়া নিরক্ষর তো ছিলেনই। এর ফলে তাদের মধ্যে কখনও কোনো একতা গড়ে ওঠেনি এবং তাদের বাগান ছেড়ে যেতে দেওয়া হয়নি। এর সরাসরি লাভ মালিকপক্ষের হয়েছিল এবং তারা একইরকমভাবে অভিবাসীদের শোষণ করে নিজেদের মুনাফা লুঠতে থাকে। অথচ তাদের ছাড়া চা উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেইসঙ্গে সামগ্রিকভাবে উত্তরবঙ্গের উন্নতিও কল্পনাতীত।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading