কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বানান-বিধির পরিচয়-
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বানান-বিধি বাংলা ভাষার বানান ও উচ্চারণের সঠিকতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বানান-বিধি প্রণয়ন করে, যা বাংলা ভাষার বানান ব্যবস্থার জন্য একটি নির্দিষ্ট রীতি ও নিয়ম প্রদান করে। এই বানান-বিধির উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষায় বানান এবং উচ্চারণের শুদ্ধতা বজায় রাখা এবং বিভিন্ন রকমের বানানগত বিভ্রান্তি দূর করা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বানান-বিধির প্রধান বৈশিষ্ট্য:
অর্থনৈতিক বানান-বিধি:
- সংস্কৃত ও বিদেশি শব্দের বাংলা বানানকে সাধারণ ও সহজতর বানান ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
- উদাহরণ: “সন্দেহ” (sandeha) – সংস্কৃতের অনুসরণ করে।
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবস্থাপনা:
- স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সঠিক ব্যবহার এবং প্রতিস্থাপন নিশ্চিত করা হয়েছে।
- উদাহরণ: “মাটি” (mati) এবং “মাটি” (matri) – একে অপর থেকে আলাদা করা।
সংস্কৃত ও তৎসম শব্দের বানান:
- সংস্কৃত ও তৎসম শব্দের বাংলা বানান প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে তাদের উচ্চারণ ও বানান সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
- উদাহরণ: “গুরু” (guru) এবং “শিক্ষা” (shiksha) – প্রাচীন সংস্কৃত বানান অনুসরণ।
সেমিকোলন ও পঁইঁট ব্যবহারের নিয়ম:
- পাংকচুয়েশন চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম সংযুক্ত করা হয়েছে যা লেখার শুদ্ধতা বজায় রাখে।
- উদাহরণ: “তিনি বাড়িতে এসেছেন, কিন্তু আমি এখনও পৌঁছাতে পারিনি।”
নতুন বানান ব্যবস্থার প্রবর্তন:
- আধুনিক শব্দের বানান প্রণয়ন এবং প্রচলিত বানান পরিবর্তন।
- উদাহরণ: “টেলিভিশন” (television) – বাংলা বানানে ‘টেলিভিশন’ ব্যবহৃত হয়।
অর্থবোধক বানান পরিবর্তন:
- কিছু শব্দের বানান পরিবর্তন করে তাদের অর্থবোধকতা বজায় রাখা হয়েছে।
- উদাহরণ: “দুঃখ” (duḥkha) – বিসর্গ চিহ্নের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে।
উদাহরণ:
- “দুর্ঘটনা” (Accident) – এখানে ‘ঘ’ ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে।
- “কর্মচারী” (Employee) – ‘চা’ শব্দাংশের সঠিক বানান নির্ধারণ করা হয়েছে।
উদ্দেশ্য ও প্রভাব:
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বানান-বিধি বাংলা ভাষায় বানানগত অমিল দূর করার চেষ্টা করেছে এবং শুদ্ধ বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছে। এটি বাংলা সাহিত্য, শিক্ষা, এবং দৈনন্দিন ব্যবহারকে একরকম অভিন্ন বানান ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে সহায়ক হয়েছে।