শর্তহীন অনুজ্ঞা এমন একটি আদেশ, যা যথোচিত কর্মের মানদন্ড নয়। বরং আমরা আমাদের বিভিন্ন কর্মে যে ব্যক্তিগত নীতিটি অনুসরণ করি, শর্তহীন অনুজ্ঞা তার গ্রহণযোগ্যতা বিচার করে। শর্তহীন অনুজ্ঞার মূল রূপটি জানার জন্য Maxim বা কর্মনীতির ধারণাটি জানা প্রয়োজন। যে নীতি অনুযায়ী মানুষ কোন কর্ম সম্পাদন করে তার নাম হল বাস্তব কর্মনীতি। এই জাতীয় কর্মনীতিকে কান্ট Personal Principle বা ব্যক্তিগত কর্মনীতিও
বলেছেন।
কান্টের এই যে নৈতিক মতবাদ আমাদের নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রে বিশেষ অভিনব। কান্ট মানুষের বিবেকের ও বুদ্ধির উপর যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন ঠিক একইভাবে তিনি কিন্তু ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দিকটিকেও অস্বীকার করেননি অর্থাৎ কান্ট তাঁর দার্শনিক আলোচনার সূত্রপাতে বিচারবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি উভয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর নৈতিক বক্তব্যের মধ্যেও আমরা এর প্রতিফলন বা উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারি। যদিও পরবর্তীকালে বহু দার্শনিক, বহু সমালোচক কান্টের যে নৈতিক বক্তব্য তার নানা রকম সমালোচনা বা নানা ত্রুটি বা দুর্বলতা প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু এই যে মানব বুদ্ধির বা মানুষের বিবেকের উপর গুরুত্ব আরোপ করা এটা কাল্টের নৈতিক বক্তব্যের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং আজকের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই যে বিবেকের জাগরণ বা অন্তরের থেকে আদেশ পাওয়া, বিবেকের থেকে নির্দেশ পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা যায়।
সুতরাং এ কথা বলা যায়- কান্টের নীতি দার্শনিক সিদ্ধান্ত এই ই যে, কর্মের পরিণামে শুভা শুভত্ব নৈতিকতার শর্ত নয়। যা কর্তব্য তাই নৈতিক। এই কর্তব্য নির্ধারণের জন্য কান্ট বুদ্ধির কাছে আবেদন করেছে যার নির্দেশ আত্মস্বার্থ পরিনাম বা উপযোগিতার প্রশ্নের উর্ধে। বুদ্ধির এই নির্দেশ একটি শর্তহীন অনুজ্ঞা। এই অনুজ্ঞায় শুধুমাত্র কর্তব্যবোধ কে নৈতিক কর্মানুষ্ঠানের কারণ বলা হয়েছে।
কান্টের নৈতিক মতবাদ অনুসারে বলা যায় যে, মানুষের প্রকৃতি জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির সমাহার। বুদ্ধিবৃত্তি মানুষকে পশু থেকে পৃথক করে তোলে। ইন্দ্রিয় বৃত্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে বিশুদ্ধ চিন্তার জীবন যাপনকে নৈতিক জীবনের আদর্শ বলায় কান্টের বিচারবাদকে কৃচ্ছতাবাদও বলা হয়। কৃচ্ছতার অর্থ সুখ বর্জন। কৃচ্ছতাবাদ অনুসারে সুখই কাম্য নয়; বরং সুখ বর্জনই কাম্য। তার নৈতিক বিধি সর্বকালে সকলের কাছে পালনীয়। মানুষ বিচার করলে বুঝতে পারে যে এই নৈতিক বিধি নিত্যও সর্বজনীন।
কান্ট তাঁর গ্রন্থে নৈতিকতার যথার্থ রূপ মেলে ধরেছেন। কান্টের মতে মানুষ যখন বিশুদ্ধ কর্তব্যবোধে
অনুপ্রাণিত হয়ে বুদ্ধির নিজস্ব অনুশাসন মেনে কাজ করে তখন সেই কাজকে নৈতিক বলে গণ্য। গণ্য করা হয়। তাঁর মতে, নৈতিকতার মৌলিক সূত্র একমাত্র বুদ্ধিতেই নিহিত আছে। তিনি বলেন যে, কর্মের নৈতিক বিচারের জন্য কর্তার অভিপ্রায় লক্ষ্য করতে হবে। যেখানে শুধু নৈতিক বিধির প্রতি শ্রদ্ধাবশতঃ আমরা তা পালন করি সেখানেই আমাদের কার্য নৈতিক বলে গণ্য হবে। কর্তব্য পালনের জন্য কর্তব্য পালনকেই কাল্ট যথার্থ নৈতিকতা বলেছেন