বাংলা ‘রামায়ণ’-এর ক্ষেত্রে যেমন কৃত্তিবাস, বাংলা মহাভারত-এর ক্ষেত্রে তেমনি কাশীরাম দাস সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি। তিনি বেদব্যাস রচিত মূল সংস্কৃত মহাভারত-এর আক্ষরিক অনুবাদ করেননি; তাঁর অনুবাদকে ভাবানুবাদ বলা যেতে পারে। এতে সংস্কৃত মহাভারতের বাইরের বিভিন্ন পৌরাণিক আখ্যান যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি স্থান পেয়েছে কবির নিজস্ব কাল্পনিক সংযােজনও।
কাশীরাম দাস তাঁর রচনাকে নানাদিক থেকে চিত্তাকর্ষক করে তােলার চেষ্টা করেছেন। ঘটনাবিন্যাসে তিনি এনেছেন নাটকীয়তা, চরিত্রগুলির মুখে বসিয়েছেন সরস উক্তি-প্রত্যুক্তি। হাস্যরস পরিবেশনের দিকেও তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল। তার এই কাহিনির সহজ-সরল বিন্যাস বাঙালি-মনকে খুব সহজেই নাড়া দেয়। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলিতেও অনেকাংশে বাঙালির জীবনযাত্রার ছায়া লক্ষ করা যায়। কাহিনি-বিন্যাসে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন সামাজিক ও পারিবারিক আদর্শকে। ধর্মনিষ্ঠা ও নৈতিকতার দিকেও তাঁর যথেষ্ট মনােযােগ ছিল। আসলে কাশীরাম দাস বিভিন্ন দিক থেকে বাঙালি জীবনের পারিবারিক ও সামাজিক আদর্শ, ধর্মবােধ ও ধ্যানধারণার সঙ্গে মহাভারতীয় ভাবাদর্শের সেতুবন্ধন ঘটিয়েছেন। সেজন্যই ধনী-দরিদ্র সকলের কাছে কৃত্তিবাসী রামায়ণের মতাে কাশীদাসী মহাভারতেরও বিপুল সমাদর। তাঁর কাব্যের সঙ্গে তিনিও চিরকাল বাঙালি-মানসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মহাকবি মধুসূদনের ভাষা ব্যবহার করে আমরাও তাঁর উদ্দেশে বলতে পারি, “হে কাশী, কবীশদলে তুমি পুণ্যবান।”