গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও :
গণতন্ত্র বলতে কোনও জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনোও সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। ইংরেজি ‘Democracy’ শব্দটি গ্রিক শব্দ Demo Kratia থেকে উদ্ভূত হয়েছে যা গ্রিক শব্দ ‘Demos’ এবং ‘Kratia’ শব্দ দুটির সমন্বয়ে সৃষ্ট। ‘Demos’শব্দের অর্থ হল ‘জনগন’ এবং ‘Kratia’শব্দের অর্থ হল ‘শাসন’। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সু্যোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। “গণতন্ত্র” পরিভাষাটি সাধারণভাবে একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হলেও অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক ইউনিয়ন, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি
গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমুহ
গণতন্ত্র বলতে সেই সরকার বা শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে জনমতের প্রাধান্য স্বীকৃত হয় এবং যেখানে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন কার্য পরিচালিত হয়। গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:
- জনসম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত
- বহুদলীয় ব্যবস্থা
- আইনের শাসন
- অধিকার সংরক্ষণ
- ভোটাধিকার
- নাগরিক স্বাধীন
- সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা
- দায়িত্বশীল
জনসম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত: গণতন্ত্র মানে জনগণের সরকার। তাই এটি জনসম্মতির উপরে নির্ভরশীল। নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটে। নির্বাচনের ফলাফলেই হল জনসম্মতি।
বহুদলীয় ব্যবস্থা : বহুদলীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রের স্বীকৃত অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দল অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত। একাধিক রাজনৈতিক দলের মাঝখান থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো প্রতিনিধি যেমন নির্বাচন করা যায় তেমনি এর উপস্থিতি বিপ্লবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
আইনের শাসন: আইনের শাসন গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। আইনের শাসনের অর্থ আইনের চোখে সকলে সমান এবং আইনের কাছ থেকে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আইনের অনুমোদন ছাড়া আটক করা যাবে না এবং উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যাবে না। জনগণ, সরকার সকলকেই আইন মেনে চলতে হয় কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
অধিকার সংরক্ষণ : গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকারগুলো আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়।
ভোটাধিকার: ভোটাধিকার গণতন্ত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ভোটাধিকারপ্রাপ্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় শাসনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। যার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
নাগরিক স্বাধীন: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের স্বাধীনতাগুলোর উল্লেখ ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকে। অর্থনৈতিক মতামত প্রকাশের সকল মাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রে স্বীকৃত। বিশেষ করে রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়োজন। এতে সরকারের ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত হয় বলে শাসনের ব্যাপারে আরো মনোযোগী হতে পারে।
সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা : গণতন্ত্রে সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। জনগণ যাতে শাসকদের অন্যায্য রোষানলে পড়ে শাস্তি ভোগ না করে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়।
দায়িত্বশীল: গণতন্ত্র দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা। সরকারকে তার কাজের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হয়। সংবিধান, ভোটাধিকার, জনমত, আইনসভা, জনপ্রতিনিধিত্ব ইত্যাদির মাধ্যমে এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যা যে, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে বুঝা যায় গণতন্ত্র একটি উৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা যা জবাবদিহিমূলক এবং দায়িত্বশীল।