চর্যাপদ কার সম্পাদনায় এবং কবে প্রকাশিত হয়?
চর্যাপদ প্রথম সম্পাদনা করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
- প্রকাশকাল: ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ।
- প্রকাশনা সংস্থা: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ (The Asiatic Society)।
চর্যাপদের রচনাকাল
চর্যাপদ রচিত হয়েছে ১০ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে।
- এটি ছিল বাংলার প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষার বিকাশের সময়।
- রচনার সময়কাল সঠিকভাবে নির্ধারণ করা না গেলেও এর ভাষা, শব্দচয়ন এবং বিষয়বস্তু বিবেচনায় এই সময়কাল অনুমান করা হয়।
চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে আলোচনা
১. ভাষার প্রকৃতি:
চর্যাপদের ভাষা আদিম বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শন। এতে প্রাকৃত, অপভ্রংশ এবং সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণ দেখা যায়।
- এটি “সন্ধ্যা ভাষা“ বা রহস্যময় ভাষা নামেও পরিচিত।
- সহজ অর্থে বোঝা কঠিন, কারণ এতে প্রতীকী ও গুপ্ত ভাষার ব্যবহার রয়েছে।
২. অপভ্রংশ ভাষার প্রভাব:
চর্যাপদের ভাষায় প্রাচীন অপভ্রংশের চিহ্ন স্পষ্ট।
উদাহরণস্বরূপ:
- শব্দরূপ: “চলিৎ” (চলেছে), “গজ” (হাতি)।
- ক্রিয়াপদে সংস্কৃত প্রভাব কম।
৩. বৌদ্ধ সহজিয়া তত্ত্বের ভাষা:
চর্যাপদের ভাষা বৌদ্ধ সহজিয়া সম্প্রদায়ের দার্শনিক চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করে।
- উদাহরণ:
“সাহে তরে গজ গাহে তরে মীন।”
এখানে “গজ” অর্থে হাতি এবং “মীন” অর্থে মাছ ব্যবহার হয়েছে গভীর প্রতীকী অর্থে।
৪. আঞ্চলিক বৈচিত্র্য:
চর্যাপদের ভাষায় তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
- কিছু শব্দ ও ধারা মাগধী প্রাকৃত এবং আরবি-ফার্সি শব্দের প্রভাব নির্দেশ করে।
৫. ছন্দ ও অলঙ্কার:
চর্যাপদের ভাষায় সহজ সরল ছন্দ এবং অলঙ্কারের ব্যবহার দেখা যায়।
- ছন্দের প্রভাব: গানের মতো স্বরলিপি।
- উপমা ও রূপকের ব্যাপক প্রয়োগ।
চর্যাপদের ভাষার গুরুত্ব
১. ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ:
চর্যাপদ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব, বিকাশ, এবং ক্রমধারা বোঝা যায়।
২. সাহিত্যিক দিক:
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের শিকড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
৩. সাংস্কৃতিক দিক:
তৎকালীন সমাজের সংস্কৃতি, জীবনধারা, এবং ধর্মীয় চেতনার ছবি ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সার্বিকভাবে, চর্যাপদের ভাষা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়, যা বাংলা ভাষার ক্রমবিকাশ এবং সাহিত্যিক ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।