চোল যুগের দেওয়াল চিত্রের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। অথবা বর্তমান ভারতের মানচিত্রে  প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য মন্দির ও চিত্রকলার  অবস্থানসহ পরিচয় ?

স্থাপত্য, মন্দির ও চিত্রকলার বিবিধ চিত্রের ধারণাটি প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে বর্ণিত রয়েছে। মানুষের জ্ঞানের পরিধি যেমন অসীম, জ্ঞানের বিষয়ও তেমনি অনন্ত। একে আমরা বলে থাকি ‘Universe of Knowledge’ এবং ‘Universe of Subjects’। বর্তমান যুগে বৈজ্ঞানিক গবেষণার , স্বচ্ছ, প্রত্যক্ষ ও পরীক্ষিত সিদ্ধান্তের প্রয়ােগ, বারংবার সংশােধন, শুদ্ধিকরণ ও যুক্তিনিষ্ঠ বাস্তববােধ এর মধ্য দিয়ে বিশ্বায়নের বিভিন্ন দিকে মানব সভ্যতা এগিয়ে চলেছে। কাজেই শুধু পরিকল্পিত মনুষ্য গৃহ-ই নয় দেবতা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর আবাস স্থলকেই বাস্তু বলা হয়। আবার বাস্তুবিদ্যাকে বলা যেতে পারে ভারতীয় স্থাপত্য বিদ্যা। এই বিদ্যার পরিধি হল নগর পরিকল্পনা, গৃহ পরিকল্পনা, কারিগরিবিদ্যা, স্থাপত্য, চিত্রশিল্প, মূর্তি নির্মাণ —এসবই বাস্তু বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

দুটি স্বতন্ত্র মাত্রা রয়েছে ভারতীয় স্থাপত্যের —(1) দ্রাবিড় ঘরানা ও (2) নাগর ঘরানা। দ্রাবিড় ঘরানার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ হল, মনসার,ময়মত এবং শিল্পরত্ন। আর নাগর ঘরানার গ্রন্থ হল—বিশ্বকর্মাস্তুশাস্ত্র, সমরাঙ্গনসূত্রধার এবং অপরাজিতপ্রভা।

সাঁচি স্থূপ :-  সাঁচি স্তুপ হল প্রাচীন ভারতের এক অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী ।সর্ব প্রথম মৌর্য সম্রাট অশােক কর্তৃক সাঁচির প্রাচীনতম স্থূপটি নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে এই স্থূপটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।প্রাচীর দ্বারা এর চারপাশে বেষ্টিত করা হয়। এবং এই পুনর্নির্মাণের ফলে সাঁচি স্কুপের আয়তন অনেক টাই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। এর প্রবেশদ্বারে বুদ্ধদেবের জীবনের বিভিন্ন কাহিনি এবং জাতক কাহিনি অলংকৃত করা রয়েছে।

বাঘ গুহা :-  বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত মধ্যপ্রদেশের ধার জেলার অন্তর্গত বাঘ গুহাগুলি প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। মােট নয়টি গুহার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলে ও বর্তমানে অবশিষ্ট রয়েছে পাঁচটি। এই সকল গুহার দেওয়ালে বেলে পাথরের উপর খােদাই করা অসামান্য গুহাচিত্র দেখা যায়। এই সকল চিত্রাবলির মূল বিষয়বস্তু হল গৌতম বুদ্ধ তথা বৌদ্ধধর্ম।

অজন্তা গুহা :-  অজন্তার গুহাচিত্রগুলি বিশ্বব্যাপী ভারতীয় চিত্রকলাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছে। অজন্তার গুহা চিত্র গুলিকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম পর্বের গুহাচিত্রগুলির রঙ গাঢ় কিন্তু অনুজ্জ্বল। তবে চিত্রগুলিতে শিল্পীর দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। এই সকল চিত্রগুলি দীর্ঘ সময় নিয়েই অঙ্কিত করা হয়েছে। খানে স্থান পেয়েছে বুদ্ধদেবের জীবনী এবং তার পূর্বজন্মের কাহিনি । অজন্তা রীতিতে পারসিক ও চৈনিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

সম্রাট কনিষ্ক নির্মিত স্তুপ :- ভারতের বৃহত্তম স্তুপটি ছিল- কুষাণ বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট কনিষ্ক নির্মিত । বর্তমানে এটি পাকিস্তানের অন্তর্গত। চিনা পর্যটক ফা-হিয়েনের বর্ণনা থেকে এই স্তুপটির সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। ১৯০৮-০৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এটি আবিষ্কৃত হয়। ‘জম্বুদ্বীপের সর্ববৃহৎ স্তুপ’ বলে ফা-হিয়েন এই স্থূপটিকে উল্লেখ করেছেন।

বৃহদেশ্বর মন্দির :-  চোল মন্দির স্থাপত্যের ইতিহাসে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ৯৮৫ থেকে ১০৭০ খ্রিস্টাব্দ। এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকীর্তি হল ( তাঞ্জাবুরের বৃহদ্বেশ্বর মন্দির) চোল রাজা প্রথম রাজরাজ নির্মিত । এই মন্দিরের নির্মাণ কার্য শুরু হয় ১০০৩ খ্রিস্টাব্দে এবং ১০১০ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়। রাজরাজেশ্বর মন্দির নামেও এই বিশাল শিব মন্দিরটি পরিচিত লাভ করে থাকে । এই ধরনের বিশাল উচ্চ মন্দির প্রাক্‌-চোল কালপর্বে ভারতে নির্মিত হয়নি বলে জানা জায়।

লিঙ্গরাজ মন্দির :- স্থাপত্য শৈলীর চরম বিকাশ দেখা যায় ওড়িশার মন্দিরগুলির মধ্যে ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরে। এই মন্দিরটি ভুবনেশ্বরের সর্ববৃহৎ মন্দির।এই মন্দিরটি নির্মিত হয়- আনুমানিক একাদশ শতাব্দীতে সােমবংশীয় রাজা যযাতি কেশরী কর্তৃক । মন্দিরটি গঠিত দেউল, জগমােহন, নাটমন্দির ও ভােগমণ্ডপ নিয়ে। সূর্য, গণেশ, কার্তিক পার্বতী, অর্ধনারীশ্বর, শিব ও ব্রহ্লার মন্দির সব মিলিয়ে ছােটো-বড়াে একশাে- টির বেশি মন্দির আছে। এই মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ হল এর প্রবেশদ্বারের স্থাপত্য নির্মিত । মন্দিরের চারপাশের দেয়ালে খােদিত রয়েছে বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ।

পরশুরামেশ্বর মন্দির :- পরশুরামেশ্বর মন্দির হল- ভুবনেশ্বরের প্রাচীনতম মন্দির । আনুমানিক সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এটি নির্মিত হয়। পুনর্নির্মাণ করা হয় ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভগ্নপ্রায় এই মন্দিরটি। মন্দিরের বাইরের দিকে কিছু পরিবর্তন করা হলেও মূল স্থাপত্যটি অপরিবর্তনীয় রাখা হয়েছে। ওড়িশার মন্দির স্থাপত্যের দুটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য এখানে দেখা যায়- দেউল ও জগমােহন।জৈন অনুচিত্র:- অনুচিত্র হল- প্রাচীন ভারতীয় চিত্রকলার মধ্যে অন্যতম স্থাপত্য । ভারতীয় অনুচিত্র গুলির মধ্যে প্রাচীন হল জৈন অনুচিত্র। মনে করা হয় দশম শতাব্দীর পূর্বে জৈন অনুচিত্রগুলি অঙ্কন শুরু হয়েছিল। এটি প্রসার লাভ করে গুজরাট, রাজস্থানসহ পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞলে । এই চিত্রগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল কৃত্রিমতার সৃষ্টি , যদি ও সময় এর সঙ্গে সঙ্গে চিত্রগুলি অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading