তুলাভিটা ঢিবির :
অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার হবিবপুর থানার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জগজীবনপুর গ্রামটি অবস্থিত। যার অন্তর্গত একটি প্রত্নস্থান হল তুলাভিটা ঢিবি। এই ঢিবি থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে তাম্রশাসন ও একটি ছোটো ভূমিস্পর্শমূদ্রা বিশিষ্ট বুদ্ধমূর্তি, যা এই অঞ্চলটিকে একটি বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ ধর্মচর্চা কেন্দ্ররূপে চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়াও এই ঢিবি থেকে পোড়ামাটির প্লেটে বিভিন্ন দেবদেবীর অঙ্কিত মূর্তি, মোটিভ ইত্যাদি পাওয়া গেছে।
পরবর্তী 1992 সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সদস্য শ্রী সুধীন দে ও অমল রায় মহাশয় এই ঢিবির মূল অংশ যা একটি বৌদ্ধবিহার ছিল তা উৎখনন করেন। এটি একটি পোড়ামাটির ইট নির্মিত বৌদ্ধবিহার এবং এটি নির্মিত হয়েছিল পাল যুগে। বিহারটির দক্ষিণভাগে একটি ইটের তৈরি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সম্ভবত উপাসনার কাজে ব্যবহৃত হত।
তুলাভিটা ঢিবি থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল পালরাজ মহেন্দ্রপালের তাম্রশাসন। এই শাসনটির উৎকীর্ণ হয়েছিল সিদ্ধমাতৃকা লিপিতে এবং সংস্কৃত ভাষায়। নবম শতকের এই পাল শাসনটির ওপরের দিকে রয়েছে রাজকীয় সিলমোহর এবং তার নীচে বৌদ্ধ চিহ্ন পদ্মফুল এবং ধর্মচক্র ও সঙ্গে হরিণের চিত্র এবং তার পরের স্থানে উৎকীর্ণ হয়েছে ‘শ্রী মহেন্দ্রপালদেব’। এই তাম্রশাসনটিতে বর্ণিত হয়েছে যে, পাল নৃপতি মহেন্দ্রপালদেব তাঁর রাজত্বকালের সপ্তম বর্ষে পুণ্ড্রবর্ধনভূক্তির অন্তর্গত কুড্ডলখাতক জয়স্কন্দভারকে পরাজিত করেন এবং তাঁর পুত্র দেবপাল এই বিজয় সমারোহে একটি ভূমিদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মহেন্দ্রপালের সেনাপতি বজ্রদেবের অনুরোধ বৌদ্ধ দেবদেবী উপাসনার ও ভিক্ষুদের আবাসের জন্য ‘নন্দদীর্ঘীক-উদঙ্গ-মহাবিহার’-এর জমি প্রদান করেন।
তুলাভিটায় আবিষ্কৃত এই তাম্রশাসনটির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ রাজা মহেন্দ্রপালদেবের নাম পাল নৃপতি হিসেবে প্রথমবার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও নন্দদীঘী বৌদ্ধবিহার বর্তমানে বিহার রাজ্যের বিক্রমশীলা মহাবিহারের সঙ্গে সমতুল্য। এখানে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন ও তাম্রশাসনটি বঙ্গে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসার সম্বন্দ্বে পাল রাজাদের উৎসাহ ও দায়িত্ববোধকে ফুটিয়ে তুলে বাংলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত করেছে।