পরিমাপ বলতে কি বোঝো ? বিভিন্ন ধরনের পরিমাপক স্কেলগুলির বিস্তারিত আলোচনা করো।

পরিমাপ কাকে বলে?

কোন কিছুর পরিমাণ নির্ণয় করাকে পরিমাপ বলে। যে কোন ভৌত সত্তা সম্পর্কে পরিমাণগত ধারণার জন্য পরিমাপের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা নানা রকম পরিমাপ করে থাকি।

পরিমাপের উদাহরণ :

  • বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব 500 মিটার । এখানে 500 মিটার হলো দৈর্ঘ্যের পরিমাপ।
  •  সোহেল বাজার থেকে 3 কিলোগ্রাম চিনি কিনে আনল। এখানে 3 কিলোগ্রাম হলো ভরের পরিমাপ।

পরিমাপের একক :

কোন ভৌত রাশিকে পরিমাপ করতে হলে ঐ জাতীয় রাশির একটা নির্দিষ্ট ও সুবিধাজনক অংশ বা খণ্ডকে প্রমাণ হিসেবে ধরে সমগ্র রাশিটি বা বস্তুটি ঐ নির্দিষ্ট মূল পরিমাপের কত গুণ বা কত অংশ তা নির্ণয় করলেই ভৌত রাশিটির পরিমাপ পাওয়া যায়। যে আদর্শ বা মূল পরিমাণের সাথে তুলনা করে ভৌত রাশিটির পরিমাপ করা হয় তাকে বলা হয় পরিমাপের একক।

পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা :

  • আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিটি কাজের সাথে পরিমাপের ব্যাপারটি জড়িত। পরিমাপকে প্রকাশ করার জন্য পরিমাপের এককের প্রয়োজন হয়।
  •  বিভিন্ন ধরনের রাশির মাত্রা বিভিন্ন। যেমনঃ ভর, দৈর্ঘ্য, সময়, তাপমাত্রা একই এককে মাপা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন একক।
  •  যে কোন ক্ষেত্রেই একই ধরনের পরিমাপেও সব পরিসর সমান নয়। এজন্য পরিমাপের বিভিন্ন স্ত্রের একক এবং এদের মধ্যে সম্পর্ক থাকে যা দিয়ে সঠিক পরিমাপ করা সম্ভব হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে পরিমাপ বলতে বোঝায়, এমন একটি ধারণাকে যা একজন শিক্ষার্থীর পাঠ্যবিষয়কেন্দ্রিক অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার নিরূপণের উদ্দেশ্যে যাচাই করে থাকে। আসলে পরিমাপ বলতে কোন কিছুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন, দূরত্ব ইত্যাদিকে বুঝায়। সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হল পরিমাপ। মূলত এর কাজ হল বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংখ্যাম্যানের মধ্যে শ্রেণীকরণ, নির্দিষ্টকরণ ও সংখ্যামূলক বর্ণন। পরিমাপের বিভিন্ন সংজ্ঞাগুলি আলোচনা করলে এর ধারণা আরও পরিস্ফুট হবে। যথা-

  • S. S. Stevens,- “Measurement is the procedure in which a researcher assigns numerical numbers or other symbols to empirical properties according to rules.”
  • C. F. Nachmias & D. Nachmias,- “Measurement is the assignment of numerical of numbers to objects, events or variables according to rules.”

অতএব বলা যায়, কোন বিশেষ নিয়মানুসারে বস্তু, ঘটনা বা চলককে সংখ্যার সাহায্যে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াই হল পরিমাপ। 

Stevens proposed his typology in a 1946 ‘Science’ article titled “On the theory of scales of measurement” -এ একটি সফল শ্রেণীকরণ করেছেন যা বিভিন্ন অন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাঁর মতে, চারটি দৃষ্টিভঙ্গিতে বা চারটি স্তরে যে কোন গবেষণার তথ্য পরিমাপ করা যেতে পারে। যথা-

  1. নামসূচক স্কেল (Nominal Scale)
  2. ক্রমসূচক স্কেল (Ordinal Scale)
  3. ব্যাপ্তিসূচক স্কেল (Interval Scale)
  4. অনুপাতসূচক স্কেল (Ratio Scale)                           

নামসূচক স্কেল:

নামসূচক স্কেল হল মূলত একটি নামকরণ বা লেবেলকরণ প্রক্রিয়া। এই প্রকার স্কেলে বস্তু, বিষয়, অবস্থা বা কোন সামাজিক প্রপঞ্চ অনুযায়ী নাম বা লেবেলের ভিত্তিতে শ্রেণীকরণ করা হয়ে থাকে। এই প্রকার স্কেল পরিমাপের সবচেয়ে দুর্বলতম স্কেল নামে পরিচিত। এই প্রকার স্কেলে তেমন কিছু পরিমাপ করা যায় না, তবে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এক শ্রেণীর সাথে অন্য শ্রেণীর পার্থক্য নির্ণয় করা যেতে পারে।

C.R. Kothari,- “Nominal scale is simply a system of assigning number symbols to events in order to label them”

নামসূচক স্কেলের বৈশিষ্ট্য:

  1. এটি পরিমাপের সহজ-সরল ও বহুল ব্যবহৃত স্কেল
  2. এটি একটি নামকরণ ও শ্রেণীকরণ প্রক্রিয়া
  3. এই প্রকার স্কেলে কোন প্রকার অবশিষ্ট থাকে না
  4. প্রতিটি শ্রেণী স্বতন্ত্র থাকে
  5. এই স্কেলের কোন সংখ্যার মধে ব্যবধান নির্ণয় সম্ভব নয়।

ক্রমসূচক স্কেল:

ক্রমসূচক বা ক্রমভিত্তিক পরিমাপ বা পর্যায় হল, যে পর্যায় চলক গুলিকে উচ্চ হতে নিম্ন অথবা বেশি হতে কমের ভিত্তিতে ক্রমানুসারে শ্রেণীকরণ কর হয়। সাধারণত ব্যক্তিত্বের গুনাবলী, দৃষ্টিভঙ্গি, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিকতা, পারদর্শিতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিমাপ প্রক্রিয়ার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। এই পরিমাপের নির্দিষ্ট কোন একক না থাকায় এগুলিকে পরস্পর সম্পর্কের ভিত্তিতে ক্রমানুসারে সাজানো হয়।

ক্রমসূচক স্কেলের বৈশিষ্ট্য-

  1. এই স্কেল নামসূচক স্কেল অপেক্ষা শক্তিশালী ও উন্নত
  2. এই স্কেলে বস্তু বিষয়ের অবস্থানকে ক্রম অনুসারে সাজানো সম্ভব
  3. একটির সাথে অন্যটির তারতম্য নির্দেশ করে না
  4. এই পরিমাপের নির্দিষ্ট কোন একক নেই
  5. পরম শূন্য বলতে কিছু নেই
  6. কোন প্রকার গাণিতিক প্রক্রিয়ার প্রয়োগ সম্ভব নয়

ব্যাপ্তিসূচক স্কেল:

শ্রেণীবিভক্তকারী ও দুরত্বের মাত্রা নির্দেশকারী পরিমাপ হল ব্যাপ্তিসূচক পরিমাপ। ক্রমসূচক পরিমাপে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় উচ্চ হতে নিম্ন অনুসারে। কিন্তু সেখানে একটি বিষয় অপর একটি বিষয় হতে কতটুকু উচ্চ বা নিম্ন তা নির্দেশ করা সম্ভব হয়ে না। ক্রমসূচক পরিমাপে এরূপ সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার জন্য ব্যাপ্তিসূচক পরিমাপ প্রয়োগ কর হয়। এতে বিভিন্ন প্রপঞ্চের শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে যৌতিক ভিত্তিতে দুটি বিষয়ের মধ্যেকার দুরত্ব নির্ধারিত ব্যাপ্তির পরিগণনার উপযোগী মাপনীকে ব্যাপ্তিসূচক স্কেল বলে।

ব্যাপ্তিসূচকস্কেলের বৈশিষ্ট্য-

  1. এটি একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ
  2. স্কোরের মধ্যেকার দূরত্ব জানা যায়
  3. মানগুলির মধ্যে তুলনা করা সম্ভব
  4. পরম শূন্য বলতে কিছু নেই। তবে কাল্পনিক শূন্য থাকে
  5. এই পরিমাপে যে কোন তথ্যকে যোগ বিয়োগ করা যায়

অনুপাতসূচক স্কেল:

অনুপাতসূচক স্কেল পরিমাপের সর্বোচ্চ পর্যায়। এই পরিমাপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল- এক্ষেত্রে একটি পরম শূন্য সংখ্যা বিদ্যমান থাকে। অনুপাতসূচক স্কেলে একটি একক থেকে অন্য এককে ব্যবধান সমান থাকে এবং এককগুলির মধ্যেকার ব্যবধানকে অনুপাতিক হারে প্রকাশ করা যায়। ফলে অনুপাতের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে তুলনা করা যায়। এ স্কেল কেবল দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্যই উল্লেখ করে না, বরং পার্থক্যের আপেক্ষিক গভীরতাও প্রকাশ করে।

অনুপাতসূচকস্কেলের বৈশিষ্ট্য-

  1. এটি বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিসম্মত স্কেল
  2. এই প্রকার স্কেলে পরম শূন্য উপস্থিত
  3. এই স্কেলে প্রাপ্ত তথ্যাবলীর সব রকম গাণিতিক বিশ্লেষণ সম্ভব
  4. এই স্কেলে সকল রকম পরিসংখ্যানগত পরিমাপ প্রযোজ্য
  5. সামাজিক গবেষণায় এর ব্যবহার কম হয়

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading