যে যুগের মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের জিনিসপত্র, হাতিয়ার, যন্ত্রপাতি তৈরিতে শুধুমাত্র পাথর বা প্রস্তর ব্যবহার করত, কোনোরকম ধাতুর ব্যবহার করতে শেখেনি বা জানত না, সেই যুগ প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত। হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতির আকার এবং তীক্ষ্ণতা দেখে ঐতিহাসিকগণ প্রস্তর যুগকে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব 5,00,000 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 3000 অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন-প্রাচীন প্রস্তর, মধ্যপ্রস্তর ও নব্যপ্রস্তর যুগ। প্রাচীন প্রস্তর যুগে তারা হাতিয়ার হিসেবে হাত-কুঠার ব্যবহার করত, যেগুলির আয়তন ছিল বিশাল এবং তাতে কোনো সৌন্দর্য ও মসৃণতা ছিল না। ভারতের মধ্যে পঞ্জাবের সোয়ান নদীর অববাহিকা ও মাদ্রাজ এই দুটি অঞ্চলে প্রস্তর যুগের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই যুগে মানুষ কৃষিকাজ বা আগুন জ্বালাতে জানত না, স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শেখেনি। বনের ফল, লতাপাতা ও পশুর মাংস খেয়ে তারা জীবনধারণ করত। আনুমানিক 8000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতে এই যুগের শেষ হয়।
ভারতে মধ্য প্রস্তর যুগ খ্রিস্টপূর্ব 8000 থেকে 4000 অব্দ পর্যন্ত বিরাজ করে। এই সময়ে মানুষের ব্যবহৃত হাতিয়ারের আকৃতি ক্ষুদ্র ছিল। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান প্রভৃতি অঞ্চলে এই যুগের হাতিয়ার পাওয়া গেছে। এই যুগের শেষদিকে জীবজন্তুকে পোষ মানানো এবং মৃৎশিল্প ও কৃষিকার্যের সূচনা হয়।
খ্রিস্টপূর্ব 4000 অব্দ থেকে ভারতে নব্যপ্রস্তর যুগের সূচনা হয়। ভারতের সর্বত্রই এই যুগের নির্দশন পাওয়া গেছে। এই যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল অনেক বেশি ধারালো, মসৃণ এবং ব্যবহারের উপযোগী। এই যুগের মানুষ আগুন জ্বালাতে, কৃষিকাজ, বাসস্থান, স্থায়ীভাবে বসবাস ও বস্ত্রবয়ন করতে শেখে। তারা কুমোরের চাকা দিয়ে মৃৎপাত্র তৈরি করত। এককথায় এই যুগে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটে।