সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্য
প্রাচীন ও মধ্যযুগে ইউরােপে সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামাে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ইউরোপের কাঠামাের মতাে না হলেও প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ভারতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন। ভারতে সামন্তপ্রথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন一
স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামজীবন:
সামন্ততান্ত্রিক সমাজের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম্যজীবন। অর্থাৎ গ্রামে বসবাসকারী সকলের প্রয়ােজনীয় সামগ্রী গ্রামেই উৎপাদিত হত। ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের যুগে এদেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামজীবনের অস্তিত্ব ছিল।
নগরায়ণের অভাব:
কৃষি উৎপাদনের জন্য গ্রাম, কৃষক, খামারবাড়ি প্রভৃতি অপরিহার্য। নগরের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার সামন্ততন্ত্রের বিরােধী। ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের যুগেও গ্রামগুলির বিকাশ ঘটে এবং নগরায়ণের বিকাশ ব্যাহত হয়।
ভারতীয় সামন্তপ্রথায় সমাজ ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক। সমাজের নিম্নস্তরের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে দেশের গােটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হত। দেশে শিল্প ও বাণিজ্য ছিল গৌণ। শিল্প ও বাণিজ্য যেটুকু ছিল তা মূলত কৃষিপ্রসূত।
ভূমি ও মানুষের সম্পর্ক:
ভারতীয় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন ব্যবস্থার মূল উপকরণ ছিল ভূমি। ভূমিকে কেন্দ্র করেই সমগ্র কৃষিকাজ চলত। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভূমির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল।
জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার অভাব:
জমিতে কৃষক উৎপাদকের কাজে নিযুক্ত থাকলেও সেই জমিতে কৃষকের ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। জমির প্রকৃত মালিক ছিল ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভু এবং চূড়ান্ত মালিক ছিল রাষ্ট্র।
সেচ ব্যবস্থায় রাস্ত্রীয় নিয়ন্ত্রণ:
কৃষিকাজের জন্য কৃষকের জমিতে জলসেচের প্রয়ােজন ছিল। ভারতীয় সামন্ততন্ত্রে এই সেচ ব্যবস্থায় কৃষকের ব্যক্তিগত অধিকার ছিল না। তা রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত।
প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব:
ভারতীয় সামন্ততন্ত্রে কৃষিজমির মালিকানা ছিল সামন্তপ্রভুর হাতে। তাই উৎপাদন ব্যবস্থা তথা সমগ্র অর্থনৈতিক কাঠামােতে স্বাভাবিকভাবেই প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।