প্রাচীন উত্তরবঙ্গের পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। 

প্রাচীন উত্তরবঙ্গের পরিবহণ ব্যবস্থা :

প্রাচীন বাংলাসহ উত্তর বাংলায় যানবাহনের মাধ্যম ছিল গোরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, নৌকা, হাতি প্রভৃতি। সাধারণ লোকেরা স্থলপথে পদব্রজে এবং জলপথে ভেলা এবং নৌকাযোগেই যাতায়াত করত। নৌকার সঙ্গে বাঙালি জীবনের ঘনিষ্ঠ আত্মিক যোগের কথা ধরা পড়েছে চর্যাগীতিতে। নৌকায় খেয়া-পারাপারের ইঙ্গিতও আছে। খেয়া-পারাপারের মাশুল আদায় হত কড়ি দিয়ে। খেয়া-পারাপারের কাজ অনেক সময় নিম্নশ্রেণির নারীরাও করতেন। নদ-নদী-খাল-বিলের উত্তর বাংলায় নৌকা ও নদীকে কেন্দ্র করে এক অধ্যাতম জীবনের রূপ-রূপক গড়ে উঠেছিল। স্থলপথে গ্রাম থেকে দূর গ্রামান্তরে বা নগরে যাওয়ার জন্য লোকায়ত যান ছিল গোরুর গাড়ি। গ্রিক ও ঐতিহাসিকদের বিবরণীতে দেখা যায়, প্রাচ্য ও গঙ্গারাষ্ট্রের রাজাদের চতুরশ্ববাহিত রখ ছিল। অশ্ববাহিত যান উচ্চকোটির লোকেরা ব্যবহার করত। সুপ্রাচীনকাল থেকেই পূর্ব ভারতে হস্তী অন্যতম প্রধান বাহন বলে গণ্য হত। এই পূর্ব ভারতেই বিশেষভাবে বাংলাদেশে ও কামরূপে হাতি ধরা ও হাতির চিকিৎসা ইত্যাদি সম্বন্ধে একটি বিশেষ শাস্ত্র গড়ে উঠেছিল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় বলতেন, হস্তী-আয়ুর্বেদ বাংলার অন্যতম প্রধান গৌরব ছিল। রাজা, সামন্ত ও মহাসামন্ত এবং বড়ো বড়ো ভূমধ্যকারীরা হাতিতে চড়ে যাতায়াত করতেন। গোরুর গাড়ির চেহারা এখনও যেরূপ প্রাচীনকালেও তাই ছিল। বাংলা ও ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন প্রস্তর ও মৃৎফলকই তার প্রমাণ। বরযাত্রায় গোরুর গাড়ি ব্যবহার করা হত। পালকির ব্যবহারও ছিল বলে মনে হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ সময়ে বাঙালি জাতি সমুদ্রপথে নানাদেশে বাণিজ্যার্থে গমন করত। কহিয়ান নামক জনৈক চৈনিক পর্যটক খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে ভারতবর্ষে আসেন। তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলা বা বাঙালিদিগের জাহাজে করে গিয়েছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading