প্রাচীন উত্তরবঙ্গের শহরের ওপর একটি বর্ণনামূলক আলোচনা করো।

প্রাচীন উত্তরবঙ্গের শহর :

বর্তমানে গঙ্গা নদীর বিভাজিকা ধরে পশ্চিমবলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হলেও, এই বিভাজন সম্পূর্ণ অপ্রশাসনিক। বর্তমানে আটটি জেলা নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিস্তৃতি। প্রাচীন যুগে এই উত্তরবঙ্গ ছিল পুণ্ড্রবর্ধনের অংশ। অবিভক্ত বাংলার রাজশাহি, বগুরা এবং অবিভক্ত দিনাজপুর নিয়ে গঠিত ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। মহাস্থানগড় শিলালেখ থেকে জানা যায় এই পুণ্ড্রবর্ধন মৌর্যদের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে পুণ্ড্রবর্ধন গুপ্ত সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভুক্তিতে পরিণত হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলা থেকে এখনও পর্যন্ত গুপ্ত আমলের মোট 10টি তাম্রলিপি পাওয়া গেছে, তার সবগুলিরই প্রাপ্তিস্থান হল উত্তরবঙ্গ।

ঐতিহাসিকগণ বর্তমান বাংলাদেশের মহাস্থানগরকে পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। পঞ্চম দামোদরপুর তাম্রলেখ থেকে জানা যায় যে, ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দিনাজপুর জেলায় গুপ্তদের আধিপত্য বজায় ছিল। মূল গুপ্ত বংশের অবসান ঘটলে মগধ এবং মালবে আরও একটি গুপ্ত বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা পরবর্তী ক্ষেত্রে গুপ্তবংশ নামে পরিচিত। মূলত, তাম্রলিপির ওপর ভিত্তি করে প্রাচীন উত্তরবঙ্গের বসূতি নগরগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাচীন উত্তরবঙ্গের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল-মহাস্থানগড় এবং বানগড়। পাণিনির রচনায়, গৌড়পুরার উল্লেখ থাকলেও সেই অঞ্চলের বর্তমান অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি। একটি সুপ্রাচীন ব্রাহ্মী লেখতে, পুণ্ড্রনগরের উল্লেখ পাওয়া যায়। করতোয়া নদীর তীরে বর্তমানে বগুরা থেকে প্রায় সাত মাইল দূরে অবস্থিত মহাস্থানগরকে প্রাচীন পুণ্ড্রনগরী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং এই অঞ্চলটিই করতোয়া মাহাত্ম্যতে পুণ্ড্রক্ষেত্র বলে বর্ণিত হয়েছে। সপ্তম শতকে আগত হিউয়েন সাং এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে সন্ধ্যাকর নন্দীর রচনায় পুণ্ড্রনগরীর সমৃদ্ধি এবং জৌলুসের ইতিবৃত্ত বর্ণিত হয়েছে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের বৈগ্রাম তাম্রলেখ থেকে পঞ্চনগরীর বিষয়ে জানা যায়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, এই পঞ্চনগরীর বিষয় দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত ছিল। দিনাজপুর জেলার পূর্বাংশ ছিল ‘পঞ্চনগরী’-র বিষয়ভূক্ত এবং পশ্চিমাংশ ছিল ‘কোটিবর্ষ’-র বিষয়ভুক্ত। বিষয় বা জেলার শাসনকর্তাকে বলা হত কুমরামাত্য। প্রাচীন তাম্রলিপি থেকে কোটিবর্ষ বিষয়ের জমিসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন উত্তরবঙ্গ ভূখণ্ডের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল পাহাড়পুর। বর্তমানে রাজশাহি জেলায় পাহাড়পুরের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে পাল আমলে পালরাজা ধর্মপাল এবং তাঁর উত্তরসূরিদের কাছে এই অঞ্চল ‘সোমপুরা’ নামে বিখ্যাত ছিল। এই পাহাড়পুর থেকেই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রত্নাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading