প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপি বা লেখামালার গুরুত্ব আলোচনা করো।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপি বা লেখামালার গুরুত্ব:

প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব সর্বাপেক্ষা বেশি। যে বিজ্ঞানের সাহায্যে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মাটি খনন করে আবিষ্কৃত বস্তু নিদর্শন ও ভূপৃষ্ঠে প্রাপ্ত পুরোনো বস্তু থেকে প্রাচীন মানুষের বাস্তবজীবন সম্পর্কে জানা যায়, তাকে প্রত্নতত্ত্ব বলা হয়। ইউরোপীয় প্রত্নতাত্ত্বিক স্যার উইলিয়ম জোন্স, জেমস প্রিন্সেপ, হ্যামিলটন বুকানন, স্যার জন মার্শাল প্রমুখ এবং ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদের মধ্যে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ারাম সাহানি প্রমুখের নিরলস গবেষণার ফলে প্রাচীন ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।

লিপি বা লেখামালার গুরুত্ব:

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলির মধ্যে লিপির গুরুত্ব সর্বাধিক। লিপি বলতে বোঝায় বিভিন্ন সরকারি তথ্য, যেমন-শাসনতান্ত্রিক লিপি। এ ছাড়াও রয়েছে ধর্মলিপি, প্রশক্তিবাচক লিপি, দানসূচক লিপি, ব্যক্তিগাত লিপি প্রকৃতি, যেগুলি লোহা, সোনা, তামা, ব্রোঞ্জ, ইট, পাথর প্রভৃতির গায়ে খোদাই করে উৎকীর্ণ করা হত। এই লিপিগুলি সাহিত্যে উল্লিখিত বিভিন্ন তথ্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। কারণ, সাহিত্যে উল্লিখিত কোনো সাল, তারিখ লিপির অনুমোদন ছাড়া ইতিহাসে মর্যাদা পায় না। লিপিগুলিতে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা, যেমন-সংস্কৃত, শ্যালি, আকৃত আঙু্যুতি এবং ব্রাহ্মী, খরোর্থী, গ্রিক, অ্যারামিক প্রভৃতি লিপিমালা বা বর্ণমাল্যার খারথার দেখা যায়, যা তৎকালীন সংস্কৃতি সম্পকে আমাদের জানাতে সাহায্য করে।

সাহিত্যিক উপাদানগুলির মতোই লিপিগুলিকেও দেশি ও বিদেশি এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। ভারতের লেখগুলির শখের অপোন্দের লোমগুলি অথম ও প্রধান। জেমস প্রিদেশ অশোকের লেখগুলি পাঠোম্মার করেন। এদু্যুলি থেকে সামাটি অশোকের ধর্মমত ও বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাদি সম্পদকে জানয়া যায়। পরর্যাদা বুরদামনের “জুনাগড় |

লিপি’, সমুদ্রগুপ্তের ‘এলাহাবাদ প্রশস্তি’, কলিঙ্গরাজ খারবেলের ‘হাতিগুম্ফা শিলালিপি’, চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশির ‘আইহোল প্রশস্তি’, গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর ‘নাসিক প্রশস্তি’ প্রভৃতি লেখগুলি থেকে ইতিহাসের নানা তথ্যাদি জানা যায়। এ ছাড়া বিদেশি লিপির মধ্যে এশিয়া মাইনরে প্রাপ্ত ‘বোঘাজকই শিলালিপি’, ‘পারস্যের বেহিস্তান’, ‘পার্সেপলিস’ ও ‘নাকশ্-ই রুস্তম’ প্রভৃতি প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে আর্যদের ভারতে আগমন এবং ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে পারসিক আধিপত্যের কথা জানা যায়।

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপির গুরুত্ব অপরিসীম-① লিপি থেকে রাজার নাম, রাজত্বকাল, সাল, তারিখ, রাজ্যজয় এবং ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে জানা যায়। ② লিপি যুগ যুগ ধরে অক্ষত থাকে বলে এগুলির সত্যতাও প্রশ্নাতীত। লিপিগুলি থেকে নির্দিষ্ট সময়ে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনের নানা দিক জানা যায়। লিপির খোদাই ও আধার থেকে সমকালীন পাথর ও ধাতুশিল্পের অগ্রগতি-অবনতির কথা জানা যায়। বিদেশি লিপিগুলি থেকে বহির্ভারতের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের কথা জানা যায়। তাই সবদিক বিচার করে বলা যায় যে, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলির মধ্যে লিপিই সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী।

পরিশেষে বলা যায়, কোনো যুগের বাস্তব পরিস্থিতির প্রকৃত প্রতিফলন একমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিকবস্তু থেকেই পাওয়া যায়। ফলে বর্তমানে সাহিত্যিক উপাদানের পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading