বড়ু চন্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচনা বৈশিষ্ট্য বা কাব্য বৈশিষ্ট্য বা বা সাহিত্যমূল্য আলোচনা কর। 

বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কাব্য বৈশিষ্ট্য :-

  চর্যাপদে বাংলা সাহিত্যের যে পথ চলা শুরু হয়েছিল তার পরবর্তী ধাপ ছিল আদি মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি  চর্যাপদ এর থেকে অনেক জ্বর মুক্ত ও পরিণত বলে ভাষাবিদগন মনে করেন। এ কাব্যের জটিলতা তিনটি চরিত্রের আবর্ত নিয়ে রচিত হয়েছে। আধুনিক যুগে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি আবিষ্কারক সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের প্রাথমিক ভীত যে আরো সুগঠিত হয়ে উঠলো তাতে কোনো দ্বিধা রইল না। 

 শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য এবং চর্যাপদ কাব্য কবিতার আদি যুগের রচনা হলেও দুয়ের মধ্যে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। এই সকল বৈশিষ্ট্যের জন্য  চর্যাপদ এর থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বৈশিষ্ট্য কত দিকের ফারাক দেখা যায়। যেমন চর্যাপদের মোট 50 টি পদ রচিত হয়েছিল কিন্তু বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে পদের এর আধিক্য নয়, 11 টি খন্ডের প্রথম পর্বের আবির্ভাব ঘটল। বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ এ যে সকল কাব্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল – 

তেরো টি খন্ডের রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বাংলা সাহিত্যে রাধা কৃষ্ণ কথার প্রথম লৌকিক আখ্যান কাব্য। জন্ম খন্ড দেবতাদের প্রার্থনায় বিশ্বকে ভারমুক্ত করতে রাধা কৃষ্ণের আবির্ভাব দিয়ে এই কাব্যের শুরু আর কংস বধের জন্য কৃষ্ণের মথুরা গমন, আক্ষেপ, যন্ত্রণা দিয়ে আখ্যানকাব্য টির সমাপ্তি ঘোষণা হয়েছে।

গীতিনাট্য বিবৃতির মিশেলে রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষে রাধার হৃদয়ের আর্তিতে গীতিময়তা, কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি” তে গীতি রসের উচ্চসিত প্রবাহ, আবার রাধাকৃষ্ণ বড়াই এর উক্তি প্রত্যুক্তি তে নাটকীয় চরিত্র লক্ষণ প্রকাশ পায়। 

আদি মধ্যযুগের সমাজ চিত্রের বিশ্বস্ত দলিল হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য। বালিকা রাধার সংসার করার মধ্য বাল্যবিবাহের নজির আছে। বিভিন্ন পেশার মানুষের পরিচয় শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে যেমন আছে তেমনি জনজীবনের অজস্র সংস্কারের নিদর্শন এই কাব্যে দেখা যায়। 

ধর্মাশ্রয়ী কাহিনী হলেও তুর্কি আক্রমণের প্রভাব যাতে অলৌকিকতার আভাস দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে। তাই বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্যের কৃষ্ণ সমস্ত অলৌকিক আবরণ সরিয়ে ফেলে একান্তভাবে হয়ে ওঠে এক গোয়ালা যুবক। তাই অনায়াসে কৃষ্ণের মুখ দিয়ে বেরিয়েছে – “রাধা না পাআ মোর বেআকুল মনে।”

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক প্রেম মূলক কাব্য যা আধুনিক যুগের কাব্য গুলিতে তার প্রভাব ফেলেছে। গ্রাম্য নর-নারীর প্রেম এ কাব্যের প্রাণ তাই কখনো কখনো স্থূল রসের পরিচয় দেখা গেলেও তা কাব্যকে অতিক্রম করেনি ।

আদি মধ্যযুগের সৃষ্টি নব্য বাংলা ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণগুলো  শ্রীকৃষ্ণকীর্তনেপাওয়া যায়। যেমন সর্বনামের কর্তী কারক এ রা বিভক্তি যোগ, আবার ভবিষ্যতের কর্তৃবাচ্যে ইব অন্তঃক্রিয়া ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। 

    শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাপর্টি আদি মধ্যযুগের সাহিত্যের নিদর্শন হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কাব্যখানি আঙ্গিকগত ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল হয়ে আছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading