‘বৈদিক সাহিত্য’ সম্পর্কে টীকা লেখো।

‘বৈদিক সাহিত্য’

বৈদিক যুগ বলতে বোঝায় সেই যুগকে, যে যুগে বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়েছিল। বলাবাহুল্য, বৈদিক যুগ সম্পর্কে জানার অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হল বৈদিক সাহিত্য। এই বৈদিক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত হল-সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ ও বেদাঙ্গ। এগুলি সবই সংস্কৃত ভাষায় রচিত। তবে ঋগ্বেদের ভাষা ধ্রুপদি সংস্কৃতের থেকেও প্রাচীনতম।

সংহিতার পর্যায়ে পড়ে চারটি বেদ। যথা-ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব। অর্থাৎ, বেদগুলি ‘সংহিতা’ নামেও পরিচিত। ‘ঋক্’-এর অর্থ হল স্তোত্রে গাঁথা প্রশংসা। আর ‘বেদ’ অর্থে বোঝায় জ্ঞান। বেদ রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রাচীনকালের বেশ কিছু ঋষি, যথা-বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ, বশিষ্ঠ, বামদেব, ভৃগু প্রমুখ। প্রথমের দিকে বহুকাল ধরে শিষ্যরা গুরুর মুখে শুনে বেদ অধ্যয়ন করত বলে এর আর এক নাম ‘শ্রুতি’।

ঋগবেদ সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। এটি দশটি মণ্ডলে বিভক্ত, যার মধ্যে আছে 102৪টি শ্লোক। ঋগবেদে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে যে সমাজ ও সভ্যতার ছবি ফুটে ওঠে তা ঋগ্‌বৈদিক সভ্যতা এবং পরবর্তী বেদগুলি সাম, যজুঃ ও অথর্ববেদ থেকে যে সমাজ ও সভ্যতার ছবি ফুটে ওঠে তা ‘পরবর্তী বৈদিক সভ্যতা’ নামে সুবিদিত। গীতিমন্ত্রের সংকলনকে বলা হয় সামবেদ বা সামসংহিতা। শুরু ও কৃয়-এই দুটি ভাগে বিভক্ত যজুর্বেদ। বাজসনেয়ী সংহিতা শুরু যজুর্বেদের অন্তর্ভুক্ত। আর কৃয় ভাগের মধ্যে রয়েছে মৈত্রায়ণী, তৈত্তিরীয়, কাঠক সংহিতা। ঋক্, সাম ও যজুঃ-এই তিনটি বেদের সমন্বিত রূপকে বলা হয় ‘ত্রয়ী’। এই ত্রয়ীর বাইরে অবস্থিত অর্থর্ববেদ, যাতে আছে ইন্দ্রজাল সংক্রান্ত মন্ত্রের সংকলন।

বেদ বা সংহিতা ছাড়াও বৈদিক সাহিত্যের মধ্যে পড়ে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ এবং বেদাঙ্গ। বেদে যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্রান্ত মন্ত্রগুলি উপস্থাপিত হয়েছে সেগুলির অর্থ ও প্রয়োগ ব্যাখ্যা করা হয়েছে ব্রাহ্মণে। উল্লেখযোগ্য ব্রাহ্মণগুলি হল-ঐতরেয়, কৌশীতাকি, শতপথ, তৈত্তিরীয়। প্রধানত গদ্যাকারে লেখা ব্রাহ্মণগুলিতে যাগযজ্ঞ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের নির্দেশিকা স্থান পেয়েছে। প্রতিটি ব্রাহ্মণ গ্রন্থের সঙ্গে পরিশিষ্ট হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে আরণ্যকগুলি। উল্লেখযোগ্য আরণ্যক হল বৃহদারণ্যক। আরণ্যকে প্রাধান্য পেয়েছে অরণ্যবাসী ঋষিদের জন্য নানা ধর্মানুশাসন।

আরণ্যকের পরিশিষ্টরূপে রচিত হয়েছিল উপনিষদগুলি। আচার্যের কাছে বসে (উপবেশ করে) শিষ্যের লঞ্চ জ্ঞানকে বলা হয় উপনিষদ। প্রধান উপনিষদগুলি হল ঐতরেয়, ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক, কৌশীতকি, কাঠক, কেন, ঈশ ও মাণ্ডুক্য। উপনিষদগুলিতে রয়েছে সুগভীর দার্শনিক জ্ঞান। আধ্যাত্মিক সত্তা, ঈশ্বর চিন্তা, আত্মা, পরমাত্মা, দেবত্ব, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রভৃতি নিয়ে সুগভীর দার্শনিক তাৎপর্যপূর্ণ কথা উল্লেখ রয়েছে উপনিষদগুলিতে। উপনিষদ হল বেদের শেষভাগ। এইজন্য একে ‘বেদান্ত’ বলা হয়।

কালক্রমে বৈদিক সাহিত্য বিশাল ও জটিল রূপ ধারণ করলে বেদ অধ্যয়নের সহায়ক- রূপে কিছু সাহিত্যের সৃষ্টি হয়, যা অপৌরুষেয় নয়। বেদ পাঠে সাহায্য করে বলে এগুলিকে বলা হয় বেদাঙ্গ। এই বেদালাগুলি হল- শিক্ষা বিশুদ্ধ উচ্চারণের নিয়মাবলি: ③ছন্দ: পদবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা; ব্যাকরণ ভাষার বিশুদ্ধ ব্যবহারের নিয়মাবলি: নিরুক্ত শব্দের উৎপত্তি ব্যাখ্যা: জ্যোতিষ: গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান ও প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা এবং কল্প: ধর্মের অনুশাসন, গৃহস্থের কর্তব্য, সামাজিক নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা। তবে বৈদিক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও বেদাঙ্গ বৈদিকোত্তর যুগে রচিত। এ ছাড়া উপনিষদকে ভিত্তি করে ভারতে ‘ষড়দর্শন’ তথা সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, পূর্ব মীমাংসা ও উত্তর মীমাংসার উৎপত্তি হয়। বেদাল্য ও ষড়দর্শন একত্রে ‘সূত্রসাহিত্য’ নামে পরিচিত। এ ছাড়াও পরবর্তীতে আর্য ঋষিরা আয়ুর্বেদ, সংগীত, শিল্পকলা অর্থনীতি, নাট্যশাস্ত্র, চারুশিল্প, স্থাপত্য শিল্প, অস্ত্রবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে নানা মূল্যবান গ্রন্থাদি রচনা করেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় ইতিহাসে বেদ ও বৈদিক সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। ঋগ্বেদ হল বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থ এবং ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। এ ছাড়া বেদ থেকেই হিন্দুধর্ম ও হিন্দুদর্শনের উৎপত্তি হয়। হিন্দুদের ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ ও অনুষ্ঠান, যেমন-জন্ম, মৃত্যু, উপনয়ন, বিবাহ, যাগযজ্ঞ প্রভৃতি যুগ যুগ ধরে বেদের নিদেশেই পালিত হয়ে আসছে।

ঋগ্‌বৈদিক সমাজে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে লেখো।

‘গোধন’ বলতে কী বোঝো?

চতুরাশ্রম প্রথা।

‘দশরাজার যুদ্ধ’ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading