অথবা, ভারতের ওপর হরপ্পা সভ্যতার অবদান আলোচনা করো।
ভারতের ওপর হরপ্পা সভ্যতার অবদান:
হরপ্পা সভ্যতা হল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা। প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন এই প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার দারোদঘাটন করে একে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ পর্যন্ত প্রসারিত করেছে। একদা মনে করা হত বৈদিক সভ্যতাই ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা। কিন্তু মেহেরগড় সভ্যতার আবিষ্কার ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত্ব খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম সহস্রাব্দে পৌঁছে দিয়েছে। হরপ্পার প্রথম পরিচয় হল এটি ছিল এক নগরসভ্যতা। ভারতে এটাই নগরায়ণের প্রথম যুগ। এদিকে থেকে বিচার করে বলা যায় এই সভ্যতা ছিল অনন্য এক নগরসভ্যতা, এর দু-হাজার বছর পরে গৌতম বুদ্ধের সময়কালে দ্বিতীয় নগরায়ণ পর্ব শুরু হয়েছে।
ভারতীয় ধর্মচিন্তায় হরপ্পার প্রভাব লক্ষ করা যায়। হরপ্পায় পশুপতি শিবের মূর্তি পাওয়া গেছে। ইনি পরবর্তীকালে ভারতীয় ধর্মবিশ্বাসে মহারুদ্র বা শিব। হরপ্পায় লিঙ্গ পূজার প্রচলন ছিল। এই ঐতিহ্য আজও হিন্দুধর্মে রয়ে গেছে। হরপ্পার মানুষ বৃক্ষ, পশু, জল ইত্যাদি প্রকৃতির নানা উপাদানের পূজা করত। এই ধারা ভারতীয় হিন্দুধর্মে আজও প্রবহমান। আজও হিন্দুরা নানা উপলক্ষ্যে পুণ্যস্নান করে থাকে, সম্ভবত হরপ্পা থেকে এই ঐতিহ্য এসেছিল। হরপ্পার মানুষ মাতৃদেবীর পূজা করত। তিনি উর্বরতার দেবী হতে পারেন, আবার আদ্যাশক্তিও হতে পারেন।
এখানে মাতৃপূজার প্রচলন ছিল, এখনও আছে। হরপ্পা সভ্যতার আর একটি বিশিষ্ট অবদান হল তার শিল্পকলা। নানা ধরনের নরনারীর মূর্তি, পুতুল, খেলনা, গাড়ি, পশু-পাখির মূর্তি ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল। একটি শিল্প সুষমামণ্ডিত নৃত্যরতা নারীমূর্তিও পাওয়া গেছে। বহু ধরনের মৃৎপাত্রও তৈরি হয়েছিল। এগুলির গায়ে ছিল নকশা ও অলংকরণ। এসব মৃৎপাত্রের বেশিরভাগ ছিল রঙিন। এসব শিল্পসৃষ্টি যে মানের হোক না কেন ভারতীয় শিল্পকলার ওপর তার প্রভাব পড়েছে।
হরপ্পার আর এক বৈশিষ্ট্য হল তার লিপি ও সীল। আড়াই হাজার সীলে তার শিল্পনৈপুণ্য যেমন ধরা পড়েছে তেমনি তার স্বাক্ষরতারও প্রমাণ রয়ে গেছে। হরপ্পার সীলে একশৃগ এক প্রাণীর চিত্র পাওয়া যায় যা এককথায় অনবদ্য। সম্ভবত ভারতীয় রাজারা এগুলি অনুসরণ করে তাঁদের মুদ্রা উৎকীর্ণ করেন। এখানে দশমিক গণনা পদ্ধতি, পরিমাপ ও ওজন ব্যবস্থা ছিল।
ভারতীয় সভ্যতার ওপর এগুলির প্রভাব ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা। হরপ্পার অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এর স্বাক্ষরতা। প্রাচীন পৃথিবীতে এমন স্বাক্ষরতার নজির খুব কম পাওয়া যায়। হরমার নগর পরিকল্পনা, উন্নত শিল্পনৈপুণ্য, বিস্তৃত বাণিজ্য, ধর্মবিশ্বাস, শিল্পকলা, লিপি, সীল ও পরিমাপ ব্যবস্থা অবশ্যই ভারতীয় সভ্যতায় স্থায়ী অবদান রেখে গিয়েছে।