ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম সামাজিক অর্থনৈতিক পটভূমি মূল্যায়ন কর | বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম উত্থানের পটভূমি আলোচনা করো  | খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো

ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম সামাজিক অর্থনৈতিক পটভূমি

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রাচীন ভারতে রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও বহু পরিবর্তন ঘটে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের প্রভাবে তৎকালীন সময়ে ভারতে প্রতিবাদী ধর্মের উদ্ভব ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে ৬৩ টি প্রতিবাদী ধর্মের উত্থান ঘটেছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম। নিন্মে প্রতিবাদী ধর্ম উত্থানের পটভূমি আলোচনা করা হল –

আড়ম্বরপূর্ণ ধর্মাচরণ ঃ

পরবর্তী বৈদিক যুগে ধর্মীয় আচার-আচরণ এবং রীতিনীতি পুরোহিত সম্প্রদায়ের কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মার মতে, এই সময় যাগযজ্ঞ, পশুবলি, জাতিভেদপ্রথা ও আড়ম্বরপ্রিয়তা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে বেঁধে ফেলেছিল। ফলে ধর্ম ও উপাসনা পদ্ধতি সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে থাকে এবং তারা এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে থাকে।

জন্মান্তরবাদের তত্ত্ব ঃ

 উপনিষদের যুগ থেকেই কর্মফলের হাত থেকে মুক্তির জন্য চেতনার উদ্ভব ঘটে। এই সময় বৈদিক ঋষিগণ মনে করতেন যে, যাগযজ্ঞ ও আড়ম্বরপূর্ণ ধর্মাচরণের মাধ্যম কর্মফল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। নৈতিক ও শুদ্ধ জীবনযাপনের মাধ্যমে কর্মফল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এইরকম চিন্তাধারা থেকেই প্রতিবাদী ধর্মের উদ্ভব ঘটে।

অর্থনৈতিক কারণ ঃ 

বৈদিক যুগের শেষদিকে আর্থসামাজিক জীবনের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।  লোহার ব্যবহারের ফলে কৃষিতে উন্নতি ঘটে। নতুন নতুন নগরের উদ্ভব হয়, শিল্প বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ফলে সমাজে বৈশ্য সম্প্রদায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু বৈদিক ধর্মে ব্যবসাবাণিজ্যকে গুরুত্ব না দেওয়ায় অর্থবান বৈশ্য সম্প্রদায় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

সামাজিক ক্ষোভ ঃ 

এই সময় সমাজে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র সম্প্রদায়ের ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক কারণে বৈশ্যরা ব্রাহ্মণদের বিরোধিতা করে। দেশশাসন, দেশরক্ষা ইত্যাদি কাজে যুক্ত থাকায় ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা সমাজে উচ্চ আসন দাবি করে। তাই লক্ষ্য করা যায়, ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীরের আবির্ভাব ঘটে।

বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের নীতি ঃ

 খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে কৃষিকাজের উন্নতির ফলে চাষের ক্ষেত্রে গরুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই একদিকে যজ্ঞের প্রয়োজনে পশুহত্যা বন্ধের চাহিদা এবং অন্যদিকে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের অহিংসার বাণী সাধারণ মানুষকে এই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে। শূদ্র শ্রেণি কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটায় এবং সামাজিক মর্যাদা দাবি করতে থাকে। বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের জাতিভেদপ্রথার বিরোধিতা শূদ্র সম্প্রদায়কে তাদের কাছে টেনে নেয়।

সবশেষে বলা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ব্রাহ্মণ্যধর্ম মানুষকে সমাজের ব্যাপক আর্থসামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারেনি। এই সময় বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম সাধারণ মানুষের উপযোগী ধর্মীয় নীতি প্রচার করলে প্রায় সমস্ত শ্রেণির মানুষ আকৃষ্ট হয় এবং প্রতিবাদী ধর্মের উত্থান ঘটে।

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading