মহাকাব্যের সংজ্ঞা:
দেবতা বা দেবতুল্য নায়কের বৃত্তান্ত নিয়ে বিশেষ রীতিতে রচিত বৃহৎ কাব্য রচনাকে মহাকাব্য নামে অভিহিত করা হয়। মহাকাব্যে প্রাকৃতিক বিবিধ দৃশ্যমালা ও পরিবর্তন বর্ণিত থাকে এবং এতে কমপক্ষে আটটি কিংবা ততোধিক সর্গ বা ভাগ থাকে। যথাঃ রামায়ণ, মহাভারত, মেঘনাদবধ ইত্যাদি।
সাহিত্যিক মহাকাব্যের আলোকে এই শ্রেণির মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য:
এ ধরনের মহাকাব্য অলংকার বিধি সম্মত রচনা। এ গুলো পরবর্তীকালের সৃষ্টি। জাত মহাকাব্যের মতো এগুলো এতো বিশাল আকারের নয়; তবে এর কাহিনি সুসংহত ও শিল্পিত বিন্যাসে সাজানো থাকে। এ কাব্যের একটি বিশেষ বিশেষত্ব হলো শিল্পনৈপুণ্য। কবির মানসপ্রকৃতি ও যুগের আকাঙ্খা এতে প্রতফলিত থাকে। কবি সমকালের সাথে সর্বকালের সংযোগ ঘটাতে পারেন। জীবনজিজ্ঞাসা এতে বাণীরুপ লাভ করে। এ মহাকাব্য মানুষের মুখে মুখে পঠিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে লেখা ভার্জিলের ‘ঈনিড’, ইংরেজ কবি জন মিলটনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ সাহিত্যিক মহাকাব্য। বাংলা ভাষার প্রাণপুরুষ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদ বধ’ নামে একটি সাহিত্যিক মহাকাব্য রচনা করেছেন। এই কাব্য ১৮৬১ সালে প্রকাশ হয়। বাংলা ভাষার একমাত্র সফল ও সার্থক সাহিত্যিক মহাকাব্য।
উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায় যে, মহাকাব্য বলতে অতিকায় কবিকৃর্তিকে বোঝায়। সাহিত্যে দুই প্রকারের মহাকাব্য রয়েছে। জাত মহাকাব্য ও সাহিত্যিক মহাকাব্য । মহাকাব্যে কোন জাতির সামাজিক, রাজনেতিক, সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিফলন ঘটে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মহাকাব্যের আদর্শের সংমিশ্রণে বাংলা ভাষায় মহাকাব্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাইকেল মধুসূদন দত্ত মহাকাব্য রচনায় শতভাগ সফলতার পরিচয় দিয়েছেন এবং বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।