রাজনীতি ও রাষ্ট্রশিল্প সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির মতামত আলোচনা কর। Discuss Machiavelli’s views on Politics and Statecraft.

 অথবা, ম্যাকিয়াভেলি কিভাবে রাজনীতির ক্ষেত্রটি ধর্ম নিরপেক্ষ করার কথা বলেছিলেন।

রাজনীতি ও রাষ্ট্রশিল্প সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির মতামত-

ভূমিকাঃ

পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ম্যাকিয়াভেলি পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল, দি প্রিন্স, দি ডিসকোর্সেস অন লিভি। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষীকরণ সম্পর্কিত ধান-ধারণা ছিল অন্যতম।

রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষীকরণঃ

মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্ম সুদীর্ঘকাল ধরে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপিত হয়েছিল। ওই সময় কোনো চিন্তাবিদ  ধর্ম বা নৈতিকতার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এক্ষেত্রে ম্যাকিয়াভেলি প্রথম সম্পূর্ণভাবে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা থেকে সরে এসেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ধর্মীয় আলোকে রাজনীতি আলোচনার যে-ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, ম্যাকিয়াভেলি তাকে সমূলে উৎপাটিত করেন।

রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষীকরনের প্রক্রিয়াঃ

ম্যাকিয়াভেলি সম্পূর্ণভাবে প্রায়োগিক দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে ধর্ম ও নীতি সম্বন্ধে তাঁর তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তায় ধর্ম ও নীতিবোধ থেকে রাষ্ট্র তথা রাজনীতিকে পৃথকীকরণের প্রচেষ্ঠা লক্ষ্য করা যায় এবং বিভিন্নভাবে তিনি তা সম্পাদন করার চেষ্ঠাও করেছিলেন। যেমন-

১) মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা থেকে সরে আসাঃ

ধর্ম ও নীতিবোধ সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলি সম্পূর্ণভাবে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা থেকে সরে এসেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ধর্মীয় আলোকে রাজনীতি আলোচনার যে-ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, ম্যাকিয়াভেলি তাকে সমূলে উৎপাটিত করেন। পাড়ুয়ার মার্সিলিও রাষ্ট্রকে ধর্ম ও গির্জার গণ্ডি থেকে বাইরে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মধ্যযুগের দার্শনিক হওয়ার জন্য তিনি এ বিষয়ে পুরোপুরি সফল হতে পারেননি। রাজনীতির অনাধ্যাত্মীকরণ প্রক্রিয়া মার্সিলিওর হাতে অর্ধসমাপ্ত থেকে গিয়েছিল। ম্যাকিয়াভেলি ধর্ম, নৈতিকতা ও রাজনীতির মধ্যে বিচ্ছেদ পাকাপাকি করে ফেলেন।

২) খ্রিস্ট ধর্মের বিরোধিতাঃ

ম্যাকিয়াভেলি খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে অত্যন্ত বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন ছিলেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি খ্রিস্টধর্মকে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, খ্রিস্টান মূল্যবোধ, বিশেষত নম্রতা, অপার্থিবতা, আত্মসমর্পণ ও বিনয়াবনত ভাব প্রভৃতি রাষ্ট্রনৈতিক জগতের সম্পূর্ণ বিরোধী। খ্রিস্টধর্ম মানুষকে কর্মচঞ্চল ও সতেজ করার পরিবর্তে নিষ্ক্রিয়, নির্জীব ও ব্যক্তিত্বহীন করে তোলে। এই ধর্ম পার্থিব সম্পদের প্রতি নিরাসক্তি এনে দিয়ে মানুষের যাবতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বিনষ্ট করে দেয় বলে তিনি মনে করতেন।

৩) রাজনীতি থেকে নীতির পৃথকীকরণঃ

ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রবর্তকরূপে ম্যাকিয়াভেলি তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে উপস্থাপন করতে গিয়ে সাবেকি নৈতিকতার ধারণা-সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। ম্যাকিয়াভেলি সাবেকি ভবিষ্যতে কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেননি। বরং, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল-বাস্তবে কী ঘটছে, সেগুলিকে নানা কৌশলে তুলে ধরা। তিনিই সর্বপ্রথম রাজনীতি থেকে নীতিকে পৃথক করেন। শুধু তাই নয় ম্যাকিয়াভেলি রাজনীতিকে ধর্মনিরপেক্ষ ও নীতি-নিরপেক্ষভাবে গড়ে তুলে স্বতন্ত্র মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

) নীতির বিরোধীতাঃ

ম্যাকিয়াভেলির কাছে রাজনীতি ছিল এমন একটি জনপ্রক্রিয়া, যার সঙ্গে ব্যক্তি ও সমাজজীবনের ন্যায়-অন্যায় বোধ ও ধর্মবোধের কোনো সম্পর্ক নেই। কীভাবে ক্ষমতা দখল করা যায় এবং কীভাবে তা কায়েম রাখা যায়, সেটিই হল এই প্রক্রিয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যের উর্ধ্বে আর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারেনা-তা সে ধর্মীয় বা নৈতিক উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন। এরূপ লক্ষ্যপূরণের জন্য যে-কোনো পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য।

মূল্যায়নঃ

পরিশেষে বলা যায় ম্যাকিয়াভেলির রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষিকরন সম্পর্কিত ধ্যানধারণা রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিল। তার এই তত্ত্ব তৎকালীন ইটালির অরাজক অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম হয়েছিল।

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading