রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়?
রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি (Political Subculture) হলো একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভেতরে বিদ্যমান বিভিন্ন গোষ্ঠী বা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব বিশেষ বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আদর্শ, এবং আচরণবিধি। এগুলি সেই জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা, ঐতিহ্য, ধর্ম, সামাজিক অবস্থান, এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি সাধারণত একটি দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে, কিংবা বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান থাকতে পারে।
রাজনৈতিক উপসংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো:
বিশেষ মতাদর্শ ও বিশ্বাস:
- রাজনৈতিক উপসংস্কৃতির মধ্যে বিদ্যমান গোষ্ঠীগুলি তাদের নিজস্ব মতাদর্শ, রাজনৈতিক বিশ্বাস, এবং মূল্যবোধের ভিত্তিতে আলাদা থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি দেশের মধ্যে এক অংশ গণতন্ত্রের প্রতি উৎসাহী হতে পারে, যেখানে অন্য অংশ রাজতন্ত্র বা অন্য কোনো শাসনব্যবস্থার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করতে পারে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
- ইতিহাসের নির্দিষ্ট ঘটনা বা অভিজ্ঞতা উপসংস্কৃতির গঠন এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন, একটি জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনতা সংগ্রাম বা বঞ্চনার অভিজ্ঞতা তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাংস্কৃতিক অভ্যাসকে প্রভাবিত করতে পারে।
আঞ্চলিক ও জাতিগত পার্থক্য:
একই দেশের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা আলাদা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও উপসংস্কৃতির ধারক হতে পারে। এটি জাতিগত, ভাষাগত, ধর্মীয় বা আঞ্চলিক পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে।
সামাজিক শ্রেণি:
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক উপসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তারা আলাদা উপসংস্কৃতি গঠন করতে পারে।
রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও আচরণ:
বিভিন্ন উপসংস্কৃতির লোকেরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিছু উপসংস্কৃতি প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে পছন্দ করে, অন্যরা সামাজিক আন্দোলন, প্রতিবাদ, বা বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করে।
উদাহরণ:
- ভারত: ভারতের মতো বহুজাতিক এবং বহুভাষিক দেশে রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, গুজরাট, এবং কেরালার মতো বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি রয়েছে, যা তাদের আঞ্চলিক ভাষা, ধর্ম, এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
- যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে এক ধরনের রক্ষণশীল উপসংস্কৃতি রয়েছে, যা ভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। অন্যদিকে, পশ্চিম উপকূলের রাজ্যগুলি সাধারণত উদারপন্থী রাজনৈতিক উপসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার:
রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। এটি একটি দেশের ভেতরে বিদ্যমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যকে চিহ্নিত করে। রাজনৈতিক উপসংস্কৃতিগুলি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে এবং একটি প্লুরালিস্টিক (বহুমাত্রিক) সমাজের গুরুত্ব তুলে ধরে।