শিক্ষার অধিকার আইন 2009 অনুযায়ী বিনা ব্যয়ে শিক্ষার অধিকার বিষয়টি বিবৃত করুন। এই আইনটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকারের ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের করণীয় কাজ গুলি লিখুন।

Table of Contents

শিক্ষার অধিকার আইন 2009 অনুযায়ী বিনা ব্যয়ে শিক্ষার অধিকার-

2009 সালে আমাদের দেশে শিক্ষার অধিকার আইন (2009) প্রকাশিত হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে 6-14 বছর বয়সি প্রত্যেক শিশুকে প্রারম্ভিক শিক্ষার অধীনে আসতে হবে। এই শিক্ষা হবে সম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক। এই আইনে বলা হয়েছে-

(ক) অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার:

(a) ছয় থেকে চোদ্দো বছর বয়সি প্রত্যেক শিশুর নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিখরচায় আবশ্যিক শিক্ষার অধিকার থাকবে।

(b) উপধারা (a)-এ উল্লেখিত উদ্দেশ্যপূরণ করতে গিয়ে শিশুকে এমন কোনো ফি দিতে বা ব্যয়ভার বহন করতে হবে না যা তার প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

(খ) ভরতি না-হওয়া বা প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ না-করা শিশুদের বিশেষ সুযোগ:

EZAHIR ছয় বছরের বেশি বয়সের কোনো শিশু কোনো বিদ্যালয়ে ভরতি না হয়ে থাকলে অথবা দূরতি হয়ে থাকলেও প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ করতে পারেনি, সেক্ষেত্রে শিশুটির বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট শ্রেণিতে তাকে ভরতি করতে হবে।

এইভাবে ভরতি হওয়া শিশুটির বিনা ব্যয়ে আবশ্যিক প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনা চালাতে পারবে। তাতে যদি তার বয়স চোদ্দো বছর পেরিয়ে যায় তাহলেও কোনো হেথা হবে না।

(গ) অন্য স্কুল ভরতি হওয়ার অধিকার:

(a) কোনো বিদ্যালয়ে যদি প্রারম্ভিক শিক্ষা সমাপ্ত করার সুযোগ না থাকে তাহলে 2 নং ধারায় দফা (ঢ)-এর (iii) ও (iv) অনুধারায় বিবৃত স্কুলগুলি বাদ দিয়ে শিশুটির অন্য যে-কোনো স্কুলে প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ করার জন্য ভরতি হওয়ার অধিকার থাকবে।

(b) যে-কোনো কারণেই হোক না কেন যদি কোনো শিশুর রাজ্যের ভিতর বা বাইরে এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে স্থানান্তরের প্রয়োজন হয় তাহলে সেই শিশুটির আইনের ২ ধারায় (চ) উপধারার (iii) ও (iv) অনুধারায় বিবৃত স্কুলগুলি বাদ দিয়ে অন্য যে-কোনো স্কুলে স্থানান্তরিত হয়ে প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করার অধিকার থাকবে।

(c) অন্য স্কুলে এইভাবে ভরতি হওয়ার প্রয়োজনে যে স্কুলে শিশুটি পাঠরত সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অবিলম্বে বিদ্যালয় পরিবর্তনের নিদর্শপত্র (Transfer Certificate) প্রদান করবেন।

(ii) বিনা ব্যায়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন (2009) বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকার, খানীয় কর্তৃপক্ষের করণীয় বিষয়গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-

(ক) সংশ্লিষ্ট সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্কুল স্থাপনের কর্তব্যকর্ম:

এই আইনের ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্দেশিত বিধি মাতাবেক এলাকার বা সীমানা নির্দিষ্ট পার্শ্ববর্তী স্থানে স্কুল থাকলে এই

আইন কার্যকর উওরর তিন বছর সময়ের মধ্যে তা স্থাপন করবেন।

(খ) আর্থিক অন্যান্য দায়ভার বহন:

(a) এই আইনের ধারাগুলি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের সম্মিলিত দায়বদ্ধতা থাকবে।

(b) এই আইন রূপায়ণের জন্য যা মূলধন এবং আবর্তক/পৌনঃপুনিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে অর্থবরাদ্দের হবে কেন্দ্রীয় সরকার তার সম্ভাব্য হিসাব তৈরি করবে।

(c) কেন্দ্রীয় সরকার সমরে সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে 7 (ii)-তে উল্লেখিত ব্যয়ের কত শতাংশ বহন করবে তা ঠিক করে রাজস্ব খাতে অনুদান হিসাবে প্রদান করবে।

(d) কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করতে পারে যাতে তিনি সংবিধানের 280 নং ধারার (3) উপধারার (ঘ) অনুধারা অনুসারে অর্থ কমিশনকে কোনো রাজ্যসরকারের এই আইন রূপায়ণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজনের বিষয়টি পরীক্ষা করে অর্থবরাদ্দের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলতে পারেন।

(e) 7(4) নং উপধারায় যাই বলা হোক না কেন রাজ্য সরকার 7(3) নং ধারা অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা এবং অন্যান্য তহবিল অর্থের জোগান দিয়ে এই আইন রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে দায়বদ্ধ থাকবে।

শিক্ষার অধিকার আইন 2009 অনুযায়ী বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকারের ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের করণীয় কাজ-

(1) কেন্দ্রীয় সরকার নিম্নে উল্লেখিত কাজগুলি করবে:

(ক) আইনের 29 নং ধারায় বর্ণিত অ্যাকাডেমিক অথরিটির সাহায্য নিয়ে একটি জাতীয় পাঠক্রম কাঠামো (National Curriculum Framework) রচনা করবে; (খ) শিক্ষকদের কী মানের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তা নির্দিষ্ট করে কার্যকর করবে;

(গ) রাজ্য সরকারকে কারিগরি সহায়তা ও যায়। সংগতি দেবে যার দ্বারা নতুন ভাবনা প্রবর্তন, গবেষণা, পরিকল্পনা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কাজের মান উন্নত করা সংশ্লিষ্ট সরকারের কৃত্য করণীয়:

সংশ্লিষ্ট সরকার নিম্নে বিবৃত কাজগুলি করবে-

(ক) প্রত্যেকটি শিশুর বিনা ব্যয়ে এবং আবশ্যিকভাবে প্রারম্ভিক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। ‘আবশ্যিক শিক্ষা’ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারের কৃত্য করণীয় হবে-

(a) ছয় থেকে চোদ্দো বছর বয়সি প্রত্যেক শিশুর প্রারম্ভিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা; এবং

(b) ছয় থেকে চোদ্দো বছর বয়সি প্রত্যেক শিশুর আবশ্যিক ভরতি, স্কুলে হাজিরা এবং প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পন্ন সুনিশ্চিত করা;

(খ) 6 নং ধারায় যেভাবে বলা হয়েছে সেইভাবে নাগালের মধ্যে স্কুলের ব্যবস্থা করা; (গ) দুর্বলতর শ্রেণির শিশু বা অক্ষমতাযুক্ত শিশুদের প্রতি যাতে পক্ষপাতমূলক আচরণ না হয় বা প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে তারা যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয় সেটা সুনিশ্চিত করা;

(ঘ) পরিকাঠামো, যেমন-স্কুলভবন, শিক্ষক এবং শিক্ষোপাদানের ব্যবস্থা করা;

(ঙ) আইনের 4 নং ধারায় উল্লেখিত বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;

(চ) প্রত্যেকটি শিশুর ক্ষেত্রে স্কুলে ভরতি, হাজিরা এবং প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ করার বিষয়ে সতর্ক নজরদারি সুনিশ্চিত করা;

(ছ) তপশিলে নির্দিষ্টকৃত মান অনুযায়ী গুণগত মানের প্রারম্ভিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা;

(জ) সময়মতো প্রারম্ভিক শিক্ষার পাঠক্রম এবং পাঠ্যসূচি প্রণয়ন সুনিশ্চিত করা;

(ঝ) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

(ঘ) স্থানীয় কর্তৃপক্ষের করণীয়:

প্রত্যেকটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত কাজগুলি করবে-

(ক) প্রত্যেকটি শিশুর বিনা ব্যয়ে এবং আবশ্যিকভাবে প্রারম্ভিক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। ‘আবশ্যিক শিক্ষা’র ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারের কৃত্য করণীয় হবে-

(i) ছয় থেকে চোদ্দো বছর বয়সি প্রত্যেক শিশুর প্রারম্ভিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা;

(ii) ছয় থেকে চোদ্দো বছর বয়সি প্রতিটি শিশুর আবশ্যিক ভরতি, স্কুলে হাজিরা এবং প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পন্ন সুনিশ্চিত করা;

(খ) 6 নং ধারায় যেভাবে বলা হয়েছে সেইভাবে নাগালের মধ্যে স্কুলের ব্যবস্থা করা;

(গ) দুর্বলতর শ্রেণির শিশু বা অক্ষমতাযুক্ত শিশুদের প্রতি যাতে পক্ষপাতমূলক আচরণ না হয় বা প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে তারা যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয় সেটা সুনিশ্চিত করা;

(ঘ) স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাসকারী 14 বছর পর্যন্ত বরসের সমস্ত শিশুর খুঁটিনাটি বিবরণ বিধি নির্দেশিত প্রণালীতে নথিবদ্ধ রাখা;

(ঙ) প্রত্যেকটি শিশুর ক্ষেত্রে স্কুলে ভরতি, হাজিরা এবং প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ করার বিষয়ে সতর্ক নজরদারি সুনিশ্চিত করা;

(চ) পরিকাঠামো, যেমন-স্কুলভবন, শিক্ষক এবং শিক্ষোপাদানের ব্যবস্থা করা;

(ছ) আইনে 4 নং ধারায় উল্লেখিত বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;

(জ) তপশিলে নির্দিষ্টকৃত মান অনুযায়ী গুণগত মানের প্রারম্ভিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা;

(ঝ) সময়মতো প্রারম্ভিক শিক্ষার পাঠক্রম এবং পাঠ্যসূচি প্রণয়ন সুনিশ্চিত করা;

(ঞ) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা

(ট) ভবঘুরে পরিবারের শিশুদের ভরতির ব্যবস্থা করা;

(ঠ) নিজ এলাকার স্কুলগুলি কেমন চলছে সেদিকে নজর রাখা;

(ড) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষাপঞ্জি তৈরি করা।

আরো পড়ুন,

শিক্ষার অধিকার আইন 2009 অনুযায়ী বিনা ব্যয়ে শিক্ষার অধিকার বিষয়টি বিবৃত করুন। এই আইনটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকারের ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের করণীয় কাজ গুলি লিখুন।

1904 খ্রিস্টাব্দে ঘোষিত লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন।

বৈষম্যহীন সমাজের জন্য সংরক্ষণ নীতি সম্পর্কে আলোচনা করুন।

শিখন অক্ষমতা কাকে বলে? শিখন অক্ষমতার শ্রেণীবিভাগ করুন এবং এদের বৈশিষ্ট্য গুলি লিখুন। এদের কিভাবে চিহ্নিত করবেন এবং শিখনের শিক্ষক ও পিতা-মাতার ভূমিকা লিখুন।

প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী কাদের বলা হয়? প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান গুলি সম্পর্কে লিখুন।

শান্তি শিক্ষা কাকে বলে? শান্তি শিক্ষা ধারণা গুলি লিখুন। শান্তি শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রকৃতি, পরিধি ও গুরুত্ব লিখুন।

অস্থি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ শিশু কাকে বলে? বিকলাঙ্গ শিশুকে কিভাবে শনাক্ত করবেন? এদের শিক্ষার ব্যবস্থার কিভাবে করবেন তা লিখুন।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা এবং সমন্বয়সাধন বলতে কী বোঝায়? অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষক, পিতা-মাতা, প্রশাসন ও সমাজের ভূমিকা লিখুন।

কম্পিউটার সাক্ষরতা ও কম্পিউটার সহযোগে শিখনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। শিক্ষাক্ষেত্রে ICT-এর ব্যবহার লিখুন।

কোঠারি কমিশন বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষার কাঠামো, পাঠক্রম, সম্পর্কে কি বলেছে? অথবা, শিক্ষায় সমসুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলি উল্লেখ করুন।

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading